আ. লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষ, এমপির গাড়ি ভাঙচুর
ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নকে ঘিরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বিকেলে দলের বর্ধিত সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।
এই সময় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের জের ধরে এলাকায় এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার পক্ষ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ সরদারপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে পাঁচজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঁরা হলেন রসুলপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান, ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন (৪০), একই ওয়ার্ডের তথ্য সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম ও সাইদুর রহমান। আহত অন্যদের মধ্যে কয়েকজন দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মকছেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক জালাল মাস্টার, দাওকান্দি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক, আবদুল মান্নান, গোলাম মোস্তফা, মোস্তাকিন, হরিরামপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম সাবু, ইদ্রিস আলী প্রমুখ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিকেল ৫টার দিকে জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের জন্য দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাই করতে রসুলপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের দলীয় সংসদ সদস্য কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন। সভা শুরুর পরপরই জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও দুর্গাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদের নেতৃত্বে দেড়-দুই হাজার নেতাকর্মী রসুলপুর মাঠে গিয়ে জড়ো হয়। এর কিছুক্ষণ পর এমপি দারার পক্ষের সঙ্গে মজিদপক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় এমপি দারা ও উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের গাড়ি ভাঙচুর করে মজিদপক্ষের লোকজন। পরে পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। পরে নেতাকর্মীদের পাহারায় এমপি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিমল কুমার চক্রবর্তী বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহতও হয়েছেন। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।
এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুস সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, বর্ধিত সভা চলার সময় আবদুল মজিদ সরদার মঞ্চে উঠে আক্রমণ শুরু করেন। মজিদ সরদারের নেতৃত্বে তাঁর পক্ষের লোকজন আগে এমপির ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় নেতাকর্মীরা বাধা দিতে গেলে মজিদপক্ষের লোকজন তাঁদের ওপরও লাঠি নিয়ে হামলা করেন। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হন। হামলাকারীরা এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িও ভাঙচুর করেছেন।
দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে পণ্ড করেছে মজিদ সরদারের সন্ত্রাসী বাহিনী। তিনি বলেন, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদদি ব্যবহার করে মজিদ সরদার বর্ধিত সভায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আওয়ামী লীগের রীতিনীতি ও গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগ প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে মজিদ সরদারকে বহিষ্কার করার দাবি জানান তিনি। মজিদ সরদারসহ তার বাহিনীকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানান তিনি।
সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, মজিদ সরদারকে একজন সন্ত্রাসী মানুষ হিসেবেই দুর্গাপুরের মানুষ জানে। জেলা আওয়ামী লীগের পদ বহন করে তাঁর এ রকম সন্ত্রাসী কার্যকলাপ মোটেই কাম্য নয়। তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মজিদ সরদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর পক্ষের লোকজন থেকে দাবি করা হয়েছে, আগে এমপি পক্ষের লোকজন মজিদ পক্ষের ওপর হামলা করেছে।