‘আশ্বাসে’ স্থগিত বাঁশখালীর আন্দোলন, এমপির দাবি উল্টো
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণবিরোধী আন্দোলন ‘আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে’ ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
আজ শনিবার বিকেলে গণ্ডামারা ভিটামাটি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী স্থানীয় গণ্ডামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভা থেকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
গণ্ডামারা গ্রামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের অর্থায়নে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত ৪ এপ্রিল এ প্রকল্পের বিরোধিতা করে এলাকাবাসীর সমাবেশে হামলার ঘটনায় চারজন নিহত ও অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। এ ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে সাড়ে ছয় হাজারের অধিক মানুষকে।
আজ জনসভার পর আন্দোলনের নেতা লিয়াকত আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, জনসভায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল্লাহ কবীর লিটন সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সবার সামনে ঘোষণা দিয়েছেন, এ আন্দোলনে যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, আহতদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হবে, এলাকাবাসীর নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে এবং যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁদের আগামী তিনদিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া লিটন বলেছেন, বিদেশ থেকে পরিবেশবিজ্ঞানী এনে এলাকায় জরিপ করা হবে। বিজ্ঞানীরা যদি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে বলেন এবং মানুষকে বোঝাতে পারেন, তাহলেই কেবল এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হবে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তেরও আশ্বাস দিয়েছেন লিটন।
লিয়াকত আলী বলেন, আবদুল্লাহ কবীর লিটনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেই আন্দোলন ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল কাফন মিছিল নিয়ে উপজেলা কার্যালয় ঘেরাও করার কথা ছিল, সেই কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হলে পুনরায় আন্দোলন শুরু হবে।
তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান আন্দোলনের নেতা লিয়াকত আলীর এসব বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ কবীর লিটন জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ না। তিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের খালাতো ভাই। তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের শুরু থেকেই সেখানে কর্তৃত্ব ফলাতে চেষ্টা করছেন। তাতে ব্যর্থ হয়ে লিটনই লিয়াকত আলীর সঙ্গে মিলে এখানকার পরিবেশ অশান্ত ও অস্থিতিশীল করছেন। তাঁরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।’
এ জন্য প্রয়োজনে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও বলেন সংসদ সদস্য। তিনি আরো বলেন, ‘এখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপযোগিতা তুলে ধরে আগামীকাল উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সমাবেশ করা হবে।’
তবে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবীর লিটন বলেন, ‘সংসদ সদস্যের এলাকার মানুষের প্রতি কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। ঘটনার পর তিনি এলাকায় আসেননি। আমি তিনদিন ধরে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলন স্থগিতে রাজি করিয়েছি। এটা একটা সাফল্য। এটা বোঝার ক্ষমতাও সংসদ সদস্যের নেই।’
লিটন আরো বলেন, ‘আজ যদি আন্দোলন স্থগিত না হতো তাহলে কাল আন্দোলনকারীরা কাফনের কাপড় পরে উপজেলা ঘেরাও করতে আসত। তখন আরো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত। এতে দেশ-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি আরো খারাপ হতে পারত।’