ব্লগার-লেখক হত্যায় ‘জড়িত’ ছয়জনের ছবি প্রকাশ
সম্প্রতি ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছয়জনের ছবি প্রকাশ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। তারা সবাই আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) নেতাকর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপি নিউজে ছয়জনের ছবি প্রকাশ করা হয়। তারা ব্লগার, লেখক হত্যায় জড়িত বলে জানিয়েছে ডিএমপি। তাদের গ্রেপ্তারে তথ্য দিলে অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
ডিএমপি জানিয়েছে, বিগত কয়েক বছরে সংঘটিত ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক ও প্রকাশক হত্যার ঘটনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে আসছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাড্ডার সাতারকুল ও মোহাম্মদপুরে এবিটির দুটি আস্তানায় গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে। এর মধ্যে বাড্ডা সাতারকুলে এবিটির সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও মোহাম্মদপুরে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। অভিযানে এবিটির দুজন সদস্য গ্রেপ্তার হয় এবং একজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের দেওয়া তথ্য ভিত্তিতে ঢাকার আশকোনা ও দক্ষিণখানে আরো দুটি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়।
গ্রেপ্তার হওয়ার আসামিদের ভিত্তিতে এবিটির নেতৃস্থানীয় ছয়জনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সহযোগিতা চেয়েছে ডিএমপি।
ছয়জন সম্পর্কে ডিএমপির বর্ণনা নিচে তুলে ধরা হলো :
১. এবিটির এই গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সংগঠক তাঁদের সংগঠনে শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ নামে পরিচিত। তাঁর বাড়ি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বলে জানা যায়। তিনি সংগঠনের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়া আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অপারেশনের সদস্য নির্বাচন ও সংগ্রহে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। টিএসসিতে অভিজিৎ রায় হত্যা, গোড়ানে নীলাদ্রী নীলয় হত্যা, লালমাটিয়ায় আহম্মেদ রশীদ টুটুল হত্যা চেষ্টা এবং সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যা মামলার তদন্তে উক্ত সকল ঘটনায় তাঁর সরাসরি উপস্থিতি এবং সার্বিক নেতৃর্ত! প্রদানের সুনির্দিষ্ট তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ছাড়া শরিফুল জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, তেজগাঁওয়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা এবং গত দুই মাসে সূত্রাপুরে সংগঠিত ব্লগার নাজিমউদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে জানা যায়। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে তাঁর উপস্থিতি ধরা পড়ে। তাঁর সমন্ধে তথ্য দাতাকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
২. এবিটির এই গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সংগঠক তাঁদের সংগঠনে সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ নামে পরিচিত। সে শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলে। তাঁর উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, চশমা পরে এবং শ্যামলা বর্ণের, তাঁর বাড়ি উত্তরবঙ্গে বলে জানা যায়। প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, ওয়াশিকুর বাবু হত্যা, নিলাদ্রী নীলয় হত্যা, মিরপুরের স্কুলশিক্ষক হত্যাচেষ্টায় তাঁর সরাসরি উপস্থিতি এবং সার্বিক নেতৃত্ব প্রদানের সুনির্দিষ্ট তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এ ছাড়া গত দুই মাসে সূত্রাপুরে সংঘটিত ব্লগার নাজিমউদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যাকাণ্ডেও তাঁর সরাসরি উপস্থিতি ও সার্বিক নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি মামলার তদন্তে জানা যায়। তিনি সংগঠনের সদস্যদের সামরিক, আইটি ও কথিত জিহাদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তাঁর সমন্ধে তথ্য দাতাকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
৩. এবিটির এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তাঁদের সংগঠনে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান নামে পরিচিত। তাঁর বাড়ি সিলেট অঞ্চলে বলে জানা যায়। তিনি সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যতম সদস্য। আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এ হত্যায় তিনি সার্বিক সমন্বয়কারী ও হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তদন্তে সাভারে শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যাকাণ্ডে তাঁর সরাসরি অংশগ্রহণের বিষয়টি পাওয়া যায়।
তিনি এবিটির বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। এবিটির এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সম্পর্কে তথ্যদাতাকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
৪. এবিটির এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তাঁদের সংগঠনে আ. সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ নামে পরিচিত। তাঁর বাড়ি কুমিল্লা অঞ্চলে বলে জানা যায়। তিনি সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যতম সদস্য। প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা ঘটনার মামলার তদন্তে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এ হত্যাচেষ্টায় তিনি সার্বিক সমন্বয়কারী ও হত্যাচেষ্টায় অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালনসহ সরাসরি অংশ নেন। এ ছাড়া তিনি সংগঠনের সদস্যদের জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণের বিষয়ে ধর্মীয় আলোচনা বা বয়ান দিয়ে থাকেন। তিনি এবিটির দুর্ধর্ষ সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। এবিটির এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সম্পর্কে তথ্যদাতাকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
৫. এবিটির এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তাদের সংগঠনে শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল নামে পরিচিত। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রাম অঞ্চলে বলে জানা যায়। তিনি সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যতম সদস্য। প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা ঘটনার মামলার তদন্তে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এ হত্যায় তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তিনি এবিটির বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। তাঁর সম্পর্কে তথ্যদাতাকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
৬. এবিটির এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তাঁদের সংগঠনে সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামস নামে পরিচিত। তাঁর বাড়ি ঢাকার পাশের কোনো জেলায় বলে জানা যায়। তিনি সংগঠনের সামরিক শাখার একজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল নেতা। অভিজিৎ রায় হত্যা, নিলাদ্রী নীল হত্যা মামলার তদন্তে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তিনি এসব ঘটনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।
এ ছাড়া তদন্তে আরো জানা যায়, তিনি সাভারে শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যাকাণ্ডেও সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তিনি এবিটির দুর্ধর্ষ সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। এবিটির এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সম্পর্কে তথ্যদাতাকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।