তালিকাভুক্ত ৫৫৬ যুদ্ধাপরাধীর বিচারে ৫২ বছর লাগবে : বারকাত
মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে দুটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল যে গতিতে বিচার করছেন, তাতে ট্রাইব্যুনালের তালিকাভুক্ত ৫৫৬ জনের বিচার করতে ৫২ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আবুল বারকাত।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত এক সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত এ কথা বলেন। ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও মৌলবাদী জঙ্গিদের উত্থান, স্বরূপ, বিস্তৃতি ও কার্যকারণ সম্পর্ক' শীর্ষক ওই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।
আবুল বারকাত বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তালিকাভুক্ত ৫৫৬ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ১৭ জনের রায় হয়েছে। এর মধ্যে একটি রায় (কাদের মোল্লার রায়) কার্যকর হয়েছে। আর একটা (কামারুজ্জামানের) হব, হব করে হয় না। দুজন কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন—জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপি নেতা আবদুল আলীম। মাত্র তিনটা রায় আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারে দুটি ট্রাইব্যুনাল কাজ করছে। এ মুহূর্তে ১৮টি মামলা চলমান। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত চিহ্নিত তালিকায় ৫৫৬ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে পাঁচ বছরে মাত্র ১৭টার রায় দিয়েছে, যার মাত্র তিনটা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে। আর এখন ২০১৫-তে ১৮টা রায় চলমান। এই যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাঁচ বছরের ব্যালান্সশিট বা হাল-হকিকত-খেরোখাতা হয়, সে ক্ষেত্রে আমার সহজ পাটিগণিত বলে, অবস্থা এ রকম চলতে থাকলে, অর্থাৎ যদি একটি ট্রাইব্যুনাল বছরে ধরে নিলাম পাঁচটা মামলার শুনানির রায় প্রদান করতে সক্ষম হয়, তাহলে দুই ট্রাইব্যুনাল মিলে ১০টার বেশি যুদ্ধাপরাধীদের মামলার শুনানিসহ রায় প্রদানে সক্ষম হবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চিহ্নিত ৫৫৬ জনের মধ্যে যে ১৭ জনের রায় ট্রাইব্যুনাল দিয়েছেন, সে সঙ্গে ১৮টি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া চলমান, সেগুলো হিসাবের বাইরে যদি রাখিও, তাহলে ৫২১টা মামলা অবশিষ্ট থাকে। সেগুলোর শুনানি ও রায় প্রদানে দুই ট্রাইব্যুনালের সময় লাগবে ৫২ বছর।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সমালোচনা
আবুল বারকাত বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন। ঘটনাটি আজ থেকে পাঁচ দিন আগে ৬ এপ্রিলের। আর ঠিক সেদিনই কোনো কালক্ষেপণ না করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক এনজিও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ... এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড কার্লাইল চরমতম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার জন্য সরকার বরাবর আহ্বান জানিয়েছেন।’
আবুল বারকাত আরো বলেন, ‘ব্যারিস্টার লর্ড কার্লাইল সাহেব কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখায় অসন্তোষ প্রকাশ করে মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যারিস্টার লর্ড কার্লাইল সাহেব সরকারের প্রতি এ আহ্বানও জানিয়েছেন যে, বাদীপক্ষের কৌঁসুলির আচরণ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘সনির্বন্ধ অনুরোধ। অনুরোধটা হলো মাত্র দুই মিনিট সময় দিন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আর লর্ড কার্লাইল সাহেব। দয়া করে পড়ুন, একাত্তরের খুনি কামারুজ্জামান যা যা করেছিল, তার মধ্যে মাত্র একটি নমুনা।...দয়া করে পড়ুন, কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল রাখার পর শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর সোহাগপুর গ্রামের বিধবাপল্লীর বাসিন্দা জোবায়দা খাতুনের প্রতিক্রিয়া।’
সেমিনারে অন্য বক্তারা ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গিত্ব দেশ থেকে দূর করতে না পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন।