এটা আমার ছেলে না, বললেন মোবাশ্বেরের বাবা
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর হত্যাযজ্ঞে অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীদের একজন মীর সামেহ মোবাশ্বেরের পরিবার এখনো যেন আছে ঘোরের মধ্যে। ছেলে যে এ ধরনের কিছু করতে পারে তা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না মোবাশ্বেরের বাবা মীর হায়েত কবির। বারবার শুধু বলে চলেছেন, ‘এটা আমার ছেলে না, এটা আমার ছেলে না।’ এমনকি এখন পর্যন্ত তিনি দেখতে যাননি ছেলের লাশটাও।
স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে ও লেভেল পাস করে এ লেভেল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল মোবেশ্বর। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল কোচিং সেন্টারে যাওয়ার কথা বলে। তার পর থেকেই আর কোনো খোঁজ ছিল না মোবাশ্বেরের । চার মাস ধরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পায়নি মোবাশ্বেরের পরিবার। আর শেষপর্যন্ত তাদের সবচেয়ে বড় ভীতিটাই বাস্তব প্রমাণিত হয়েছে। মোবাশ্বেরকে দলে ভিড়িয়েছে সন্ত্রাসীরা।
গত শুক্রবার রাতে গুলশানে হামলার পর আইএসের বরাত দিয়ে পাঁচ হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। সেখানে দেখা যায় মোবাশ্বেরও। ছেলে যে এ ধরনের একটা নৃশংস কাণ্ড ঘটাতে পারে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বাবা হায়েত কবির। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমি যদি কোনোভাবে জানতাম যে সে সেখানে যাচ্ছে, তাহলে আমার জীবন দিয়ে হলেও সেটা থামাতাম। এটা হতেই পারে না।’
১৮ বছর বয়সী মোবাশ্বের খুব সংবেদনশীল ও তার খুব বেশি বন্ধুবান্ধব ছিল না বলে জানিয়েছেন হায়েত কবির। ছোটবেলা থেকেই সে আগ্রহী ছিল ধর্মের প্রতি। ভুল ব্যাখ্যায় যেন বিভ্রান্ত না হয়, ইসলাম ধর্মকে যেন সঠিকভাবে জানতে পারে সে জন্য তিনি মোবাশ্বেরের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ইংরেজি সংস্করণের কোরআন। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনো কিছুই কাজে আসেনি বলে আক্ষেপ করেছেন হায়েত কবির। তিনি বলেছেন, ‘আমি জানি না তারা তাকে ঠিক কী বলেছে। কিন্তু আমার মনে হয় তারা এই ধর্মীয় বিশ্বাসের সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে।’
গুলশানে হামলার ঘটনাটা মোবাশ্বেরের সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল না বলেই বিশ্বাস হায়েত কবিরের। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সেই পরিবারগুলোর কাছে হয়তো এর কোনোই অর্থ নেই। আমি জানি না তাঁরা শুনছেন কি না। কিন্তু আমি তাঁদেরকে বলতে চাই, এটা আমার সন্তানের সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল না।’
হামলায় অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীদের লাশ এখনো আছে পুলিশের কাছে। কিন্তু বিপথে চলে যাওয়া সন্তানের নিথর দেহটি দেখার শক্তিও সঞ্চয় করতে পারেননি হায়েত কবির। মোবাশ্বের আবার কোনো একদিন তাঁর কাছে ফিরে আসবে, এই মিথ্যা আশ্বাস দিয়েই নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছেন তিনি, ‘আমি এখনো বিশ্বাস করতে চাই যে, সামেহ ওই লাশের মধ্যে নেই। আমি এখনো অপেক্ষা করতে চাই আশা নিয়ে।’