উগ্রপন্থী নির্মূলে আবারো ঐক্যের ডাক খালেদা জিয়ার
গুলশানের পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশ থেকে উগ্রপন্থীদের নির্মূলে আবারো জাতীয় ঐক্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এই মুহূর্তে দেশের জনগণ এক ভয়ঙ্কর দুঃসময়ের মধ্যে দিনাতিপাত করছে উল্লেখ করে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দুঃসময়ে স্বপ্নচূড়া থেকে নেমে এসে সকলে মিলে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের পথে এগিয়ে গেলে দেশ থেকে সন্ত্রাসী উগ্রবাদীদের সকল অপতৎপরতা নির্মূল করা সম্ভব। ঐক্যবদ্ধ শক্তির অদম্য সাহসের কাছে কখনোই কোনো অশুভ শক্তির উত্থান সম্ভব নয়।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনার পর সন্ধ্যায় পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন। তিনি এ ঘটনায় দায়ী প্রকৃত অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
দেশের সর্ব বৃহৎ ঈদ জামাত শোলাকিয়ার এ হামলার তীব্র নিন্দা, ধিক্কার জানিয়ে খালেদা জিয়া নিহত দুই পুলিশ সদস্য ও নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁদের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
এর আগে গত ১ জুলাই রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় দেশি-বিদেশিসহ মোট ২২ জন নিহত হয়। এর বাইরে এ ঘটনায় নিহত ছয়জনকে হামলাকারী জঙ্গি বলে দাবি করেছে পুলিশ।
গুলশানের হামলার ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার মাঠের পাশেই হামলা চালাল সন্ত্রাসীরা। গুলশানের ঘটনার পরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আজ শোলাকিয়া হামলার পরও তিনি একই আহ্বান জানালেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বারবার কঠোর নিরাপত্তার কথা বলা হলেও বিদ্যমান সকল নিরাপত্তাকে ভেদ করে সন্ত্রাসী উগ্রপন্থীরা একের পর এক তাদের বেপরোয়া জীবনবিনাশী সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে- এই উগ্রপন্থী অশুভ শক্তি সারাদেশকেই তাদের অভয়ারণ্য মনে করছে। মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে রক্তক্ষরণের দ্বারা তারা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে সেটা তারা মনে করছে না। জনজীবনে প্রাণের স্পন্দন নেই। মানুষের কোলাহল থেমে গিয়ে চারদিক যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। সন্ত্রাসীরা একের পর এক অভিনব প্রাণঘাতী হামলা করে সারা দেশটাকেই যেন একটা গোরস্তানে পরিণত করতে চায়। এ দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে এখন অধিক সংখ্যক অস্বাভাবিক মৃত্যুর জানাজায় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে মানুষকে।’
সরকার শত চেষ্টা করেও তার ব্যর্থতা ঢাকা দিতে পারছে না। শুরু থেকেই যথার্থ পদক্ষেপের মাধ্যমে এই কুপথগামী অন্ধশক্তির তৎপরতা রুখে দিতে পারলে এখন এত ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারত না বলে মনে করেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
হামলাকারীদের মানবজাতির অগ্রগতির শত্রু অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি আবারো উদাত্ত কণ্ঠে বলছি- এই বর্বর অপশক্তিকে নির্মূল করতে বিভেদ-বিভাজনের পথ থেকে সরে এসে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। মত ও পথের ভিন্নতা থাকবে তথাপিও জাতির এই সংকটকালে জনগণের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।’
অপর এক বিবৃতিতে শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শোলাকিয়ার ঘটনা উগ্রবাদী শক্তির সেই বিশাল নেটওয়ার্কেরই অংশ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিন্তু সরকার প্রকৃত জঙ্গিদের অপতৎপরতার নেটওয়ার্ক খুঁজে বের না করে বারবার বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর ওপর দায় চাপিয়েছে। এতে জঙ্গিরা অত্যন্ত স্বস্তিবোধ করেছে এবং তারা তাদের শক্তি আরো বৃদ্ধি করেছে, যার বহি:প্রকাশ আমরা দেখতে পাচ্ছি এক সপ্তাহের মধ্যেই উগ্রবাদীদের কয়েকটি পৈশাচিক হামলা এবং অসংখ্য হতাহতের ঘটনা।’