পাহাড়ে লেগেছে বৈসাবির রং
পুরাতন বছরের বিদায় ও নতুন বছরের আগমনের উৎসব বৈসাবিকে ঘিরে নতুন সাজে সেজেছে পাহাড়ি জনপদ বান্দরবান। তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলার মধ্য দিয়ে আজ রোববার থেকে জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে বৈসাবি উৎসব।
স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের আয়োজনে ১২ এপ্রিল থেকে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব চলবে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত।
বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় উৎসবকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকজন ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন করে। মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিসু ও চাকমারা বিজু হিসেবে পালন করে বৈসাবি উৎসবকে। বছরের শেষ দুই দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এ উৎসব পালন করা হয়।
বান্দরবানে বৈসাবি ও পয়লা বৈশাখ সরকারিভাবে পালন করা হবে। এদিন সকাল ৭টায় স্থানীয় রাজবাড়ী মাঠ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে আবার রাজার মাঠে গিয়ে শেষ হবে। রাজার মাঠ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে পান্তা-ইলিশ, আলুভর্তা পরিবেশন চলবে সকাল ৭টা থেকে। সকাল ৮টায় রাজার মাঠে পাহাড়ি-বাঙালি শিশু-কিশোর ও শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। বেলা ৩টায় রাজার মাঠে পুরুষদের বলীখেলা ও সাড়ে ৩টায় নারীদের দাঁড়িয়াবান্ধা খেলা হবে।
বিসু উৎসব
ঘিলা খেলার মাধ্যমে রোববার বান্দরবান সদর উপজেলার রেইছা সিনিয়রপাড়ায় তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বিসু উৎসব শুরু হবে। উৎসবের উদ্বোধন করবেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। এ ছাড়া বয়স্ক পূজা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিসু উৎসব কমিটির সদস্য সচিব মুক্তাধন তঞ্চঙ্গ্যা।
সাংগ্রাই উৎসব
বান্দরবানে এবার চার দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে দুদিনব্যাপী পানিখেলা, পিঠা তৈরি, বলীখেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন চলছে বলে জানিয়েছেন উৎসব আয়োজক কমিটির সভাপতি মংচিনু মারমা।
সাংগ্রাই উৎসবের মূল আকর্ষণ-মৈত্রী পানিবর্ষণ জলকেলি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ১৫ ও ১৬ এপ্রিল। দিনব্যাপী জেলা শহরের পুরাতন রাজবাড়ী মাঠে, সদর উপজেলার রেইছা থলিপাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলার হাইস্কুল মাঠে তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠবে জলকেলি বা পানিখেলায়। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় পুরাতন রাজবাড়ী মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মারমা শিল্পীগোষ্ঠীসহ স্থানীয় শিল্পীরা নাচ-গান পরিবেশন করবেন। এ ছাড়া সন্ধ্যা ৭টায় রাজগুর বৌদ্ধবিহারসহ (ক্যায়াং) বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় হাজার হাজার প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে পাহাড়ি নারী-পুরুষরা প্রার্থনায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করবেন।
চাংক্রান উৎসব
বান্দরবানের টংকাবতী ইউনিয়নের সাক্ষ্যয়পাড়ায় ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন ঐতিহব্যবাহী চাংক্রান উৎসবের আয়োজন করেছে। আগামী সোমবার দুই দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করবেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। উৎসবকে ঘিরে ম্রোরা পানিখেলা, তৈলাক্ত বাঁশে আরোহন, লাঠি দিয়ে বিভিন্ন কায়দায় শক্তি প্রদর্শন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।