মাঠে খালেদা জিয়াকে জবাব দেবে আ.লীগ
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী প্রচারের মাঠে জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অবরোধ-হরতাল চলাকালে জ্বালাও-পোড়াও ও ‘মানুষ হত্যার’ জবাব চেয়ে কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন দলটি। সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সম্প্রতি গঠিত ‘সহস্র নাগরিক কমিটি’ও মাঠে থাকবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া ভোটের অধিকার রক্ষার দাবিতে হরতাল-অবরোধ আন্দোলন করে ১৩৮ জন মানুষের জীবন নিয়েছেন। তিনি সরকারের পতন ঘটাতে আন্দোলন করেছেন, কিন্তু পারেননি। সেই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে দলসমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার নেই খালেদা জিয়ার।
‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যেখানেই ভোট চাইতে প্রচারে নামবেন, সেখানেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যার জবাব চেয়ে লিফলেট বিলি, মানববন্ধন করবে। খালেদা জিয়ার প্রচারের নির্ধারিত স্থানে থাকবে জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যার প্রতিবাদে ব্যানার, ফেস্টুন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে,’ বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগ নেতা আরো বলেন, খালেদা জিয়া ভোট চাইতে নামতেই পারেন। তবে কোন লজ্জায় ভোট চাইবেন, সে প্রশ্ন থেকে যায়। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আন্দোলন থেকেও ঘরে ফিরে গেছেন, জনগণের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে প্রচার বাদ দিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন।
সহস্র নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারেন না। তিনি বলেন, তাঁর প্রচারের বিরুদ্ধে আমাদেরও কর্মসূচি থাকবে। কর্মপরিকল্পনাও তৈরি করছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত দুই প্রার্থীর পক্ষে খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। দলটি ঢাকা উত্তরে তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ থেকে উত্তরে আনিসুল হক এবং দক্ষিণে সাঈদ খোকন সমর্থন পেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি বড় দলের নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীও। তাঁর নির্বাচনী প্রচারে নামা ভোটারদের মধ্যে একটি প্রভাব সৃষ্টি করবে, এটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি বিএনপির রাজনৈতিক ‘ওয়ার্মআপ’ও হবে। ফলে আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার প্রচারকে হালকাভাবে দেখতে রাজি নয়।
আজ রোববার রাজধানীর উত্তরায় তাবিথ আউয়ালের বাস মার্কার পক্ষে প্রচার চালানোর সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধা ও কালো পতাকার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া ও তাঁর গাড়িবহর।
যদিও বিএনপির চেয়ারপারসন বলেছেন, ‘ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, এ রকম সাড়া আমি কখনো দেখিনি।... আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধায় কিছু আসে-যায় না। এগুলো নগণ্য জিনিস। এরা মানুষের তোড়ে খড়কুটোর মতো ভেসে গেছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, খালেদা জিয়ার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে নামা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে তিন মাস ধরে সারা দেশে উনি যে তাণ্ডব চালিয়েছেন, মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন, দেশের সম্পদ নষ্ট করেছেন এর কী হবে? তিনি বলেন, ‘দেখুন, তিনি (খালেদা জিয়া) ভোটের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন থেকে কী নিয়ে তিনি ঘরে ফিরলেন, আবার কীভাবে জনগণের কাছে ভোট চাইবেন।’
কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, আমরা আশা করি, এটারও জবাব পেয়ে যাবেন এর মধ্য দিয়ে। খালেদার প্রচারের জবাবে আওয়ামী লীগেরও নানা কৌশল থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিনও খালেদার প্রচারের জবাবে আওয়ামী লীগেরও বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে বলে জানান।