হাসনাতকে রিমান্ডে নেওয়ার কারণ
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে আটদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আর এ রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে আজ শনিবার পুলিশ আদালতে একটি প্রতিবেদন (ফরোয়ার্ডিং) দাখিল করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ জুলাই হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের হামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান নিহত হন। রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। এই ভয়াবহ হামলার সময় জঙ্গিদের সঙ্গে হোটেলের মধ্যে উক্ত আসামি সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করেছিল এবং জঙ্গিদের সঙ্গে সখ্য করেছিল।
আসামি হাসনাত নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির প্রাক্তন শিক্ষক। এর আগে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল।
হাসনাত ও ওই ঘটনায় জড়িত অপর আসামিরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ওই ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা উদঘাটনের লক্ষ্যে এই আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।
এদিকে এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে হাসনাতের আইনজীবী মাহবুবুল আলম দুলাল রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন।
আইনজীবী শুনানিতে বলেন, ঘটনাক্রমে তিনি (হাসনাত) সেদিন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হলি আর্টিজানে খেতে গিয়েছিলেন।
আইনজীবী বলেন, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কেউ জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে যাবে না। ওই ঘটনার পর থেকে ৩২ দিন পুলিশ হেফাজতেই ছিলেন হাসনাত। তিনি জড়িত থাকলে এতদিনে তথ্য উদ্ঘাটন হতো।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) বলেন, ‘এই আসামি যে ওই ঘটনায় জড়িত তার ভিডিওচিত্র আছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।’
শুনানি শেষে শনিবার ঢাকা মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক হাসনাতের আটদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এসআই ফরিদ মিয়া এ বিষয়ে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ খানকে ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবী ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাঁকে ৫৪ ধারায় আদালতে আনা হয়েছিল।
তাহমিদের বিষয়ে ওই আদালতের জিআরও এসআই রনপ কুমার ভক্ত নিশ্চিত করেন।
গত ৪ আগস্ট হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানকে ৫৪ ধারায় আটদিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। সে রিমান্ড আজ শেষ হওয়ায় আদালতে হাজির করা হয়।
গত ৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে গুলশানে আড়ংয়ের সামনে থেকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে এবং সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি-ব্লক থেকে কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে ৫৪ ধারায় আটক করে পুলিশ।
তাহমিদ হাসিব খান আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে। তিনি কানাডার স্থায়ী নাগরিক। ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলার দিনই দুপুরে ঢাকায় আসেন তাহমিদ।
অপরদিকে হাসনাত বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দ্বৈত নাগরিক। সম্প্রতি তিনি দেশে এসে বাবার প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিভিন্ন সূত্র বলেছে, ঘটনার দিন মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি হলি আর্টিজানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন।
গুলশান হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত নয়জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এঁরা হলেন হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ক্যাশিয়ার আল-আমিন চৌধুরী সিজান, ওই রেস্তোরাঁর স্টাফ মিরাজ হোসেন, রাসেল মাসুদ, বাবুর্চি মো. শাহিন, শাহরিয়ার, তুহিন, শিশির ও মেট্রোরেল প্রকল্পের চালক বাসেদ সরদার এবং রেস্তোরাঁয় খেতে আসা ভারতীয় নাগরিক সত্য প্রকাশ।
নথি থেকে জানা যায়, গত ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টায় গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারী জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে।
এ সময় অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালা৯হউদ্দিন খান নিহত হন। রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনী কমান্ডো অভিযান চালায়। এতে পাঁচ হামলাকারী ও রেস্তোরাঁর এক কর্মী নিহত হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জিম্মিকে।
এই ঘটনায় নিহত জঙ্গিরা হলেন মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও সফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল।
রেস্টুরেন্টে হামলার পর গত ৪ জুলাই রাতে গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন।