শাহাদাতের সঙ্গে আপস করিনি : বাদী
ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্যের বিরুদ্ধে গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় কোনো ধরনের আপস হয়নি বলে আদালতকে জানিয়েছেন মামলার বাদী খন্দকার মোজাম্মেল হক।
আজ বুধবার ঢাকার পাঁচ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তানজিলা ইসমাইলের আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এ কথা বলেন মামলার বাদী।
জবানবন্দিতে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে পল্লবীর সাংবাদিক কলোনির ৩ নম্বর রোডের মাথায় হ্যাপিকে (১১) অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এক ব্যক্তি। তিনি আমাকে হ্যাপির বিষয়ে জানালে তাৎক্ষণিক আমি সেখানে যাই। আমি তাকে গুরুতর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। পরে তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, সে ক্রিকেটার শাহাদাতের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। সেখানে শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রী তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে। ঘটনার দিন প্রাণে বাঁচতে সে বাসা থেকে পালিয়ে আসে। এরপর হ্যাপি আমাকে তারা যেভাবে নির্যাতন করে তার বর্ণনা দেয়। ওই রাতেই আমি মিরপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করি।’
বাদী আরো বলেন, ‘গৃহকর্মী হ্যাপিকে নির্যাতনের মামলায় আমি আসামিদের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করিনি। শাহাদাতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমি তাদের সঙ্গে আপস করেছি এবং তাদের কাছ থেকে চার লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছি, এটা সত্য নয়।’
জবানবন্দির পর আসামিপক্ষের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বাদীকে জেরা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আজগর স্বপন জানান, এ ছাড়া আজ আদালতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মেডিকেল অফিসার ডা. মাধবী কর্মকার ও একই হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডা. নুসরাত ফাতেমা সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
গত ২৪ আগস্ট গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপি ও তার মামা সোহাগ আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যে শাহাদাত দম্পতির নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছেন তাঁরা।
আজ সাক্ষ্য গ্রহণের সময় শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুর রহমান এই দম্পতির বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে শাহাদাত আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, স্ত্রী নিত্যকে গত বছরের ৪ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাত সাড়ে ৩টায় মালিবাগের পাবনা গলিতে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ।
গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারা মোতাবেক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একটি জবানবন্দি দিয়েছে ভিকটিম হ্যাপি।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় ক্রিকেটার শাহাদাত তাঁর বাসার গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে একটি জিডি করেন। এরপর একই দিন রাত ৮টার দিকে মিরপুরের পল্লবী এলাকা থেকে হ্যাপিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর তাকে মিরপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে হ্যাপি অভিযোগ করে, শাহাদাতের বাসায় তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হতো।
পরে পুলিশ হ্যাপিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে। একই সঙ্গে খন্দকার মোজাম্মেল হক নামের ওই এলাকায় বসবাসকারী এক সাংবাদিক শিশু নির্যাতনের দায়ে শাহাদাতের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।