টাম্পাকোর ৩ কোটি টাকার মালামাল চুরির অভিযোগে মামলা
গাজীপুরের টঙ্গীতে বিসিক এলাকায় টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেডের কারখানার প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের মালামাল বা ওয়েস্টেজ লুটপাটের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
কারখানাটির নিরাপত্তা প্রহরী ওয়াজেদ মোল্লা গতকাল বুধবার বাদী হয়ে টঙ্গী মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টঙ্গীর বিসিক এলাকায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন টাম্পাকো ফয়েল কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ভবন ধসে পড়ে। আগুনে দগ্ধ হয়ে ও ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ৪০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ১১ জনের নামের তালিকা করেছে জেলা প্রশাসন।
উদ্ধার দল জানায়, ঘটনার একদিন পর থেকে নিখোঁজদের সন্ধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের নেতৃত্বে উদ্ধারকাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলছে। উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা। উদ্ধারকর্মীরা ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ঘটনাস্থল থেকে ধসে পড়া কারখানার যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন অবকাঠামোর রড, ইট, প্লাস্টিক দানা বা বিভিন্ন কাঁচামাল, কাগজের রোল, স্যানিটারি ফিটিংস, লোহাসহ ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করেছে। টঙ্গীর পাগাড়ের একটি আবাসন প্রকল্পের প্লটে, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের নিমতলী রেলগেটের পাশে ও আমতলী রেলজংশন এলাকার খালি জায়গায় কারখানাটির ধ্বংসাবশেষ স্তূপ করে রাখা হচ্ছে।
টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, ধ্বংসাবশেষ রাখা তিনটি স্থান উন্মুক্ত হওয়ায় কিছু মালামাল খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ঘটনায় কারখানার নিরাপত্তা প্রহরী ওয়াজেদ মোল্লা অজ্ঞাতদের আসামি করে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের মালামাল বা ওয়েস্টেজ চুরি ও লুটপাটের অভিযোগে টঙ্গী মডেল থানায় মামলা (নম্বর ৫) করেছেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ স্থানীয় একটি কারখানাসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালায়। এ সময় কিছু মালামাল জব্দ করা হয়। তবে নির্দিষ্ট স্থানে জায়গা-স্বল্পতার কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু মালামাল পার্শ্ববর্তী এক কারখানাসহ পাশের প্লটে সরিয়ে রাখা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরো জানান, মামলাটিতে চুরি হওয়া মালামালের মূল্য তিন কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। তবে বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। অসৎ উদ্দেশ্যে, বিশেষ করে ইন্স্যুরেন্সের সুবিধা আদায়ের জন্য এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টঙ্গী মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আলমগীর হোসেন জানান, ধ্বংসস্তূপ অপসারণ বা উদ্ধার অভিযান চলাকালে মালামাল চুরি গেছে—এ অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আসাদুর রহমান কিরণ জানান, মালামালগুলো চুরি হয়নি। নির্দিষ্ট স্থানে জায়গার স্বল্পতার কারণে কিছু মালামাল পাশের প্লটে রাখা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা হওয়ায় ওই সব মালামাল কারখানা কর্তৃপক্ষের হেফাজতে ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
কারখানাটিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানার মালিক মকবুল হোসেনকে প্রধান আসামি করে টঙ্গী মডেল থানায় এ পর্যন্ত দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর কারখানার মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন নিহত শ্রমিক জুয়েলের পিতা আবদুল কাদের। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে টঙ্গী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অজয় কুমার বাদী হয়ে কারখানা মালিকসহ ১০ জনকে আসামি করে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন। উভয় মামলায় মালিকের স্ত্রীকেও আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলা দায়ের হলেও গতকাল বুধবার পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।