বাবার সব স্বপ্ন ভেঙে লিপু এখন শুধুই স্মৃতি
বাবার আশা ছিল লেখাপড়া শিখে পরিবারের সব কষ্ট দূর করবেন ছেলে। আর তাই তো ট্রাকচালক বাবা তাঁর উপার্জনের সবটুকু তুলে দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) পড়ুয়া ছেলের হাতে। বাবার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। কারণ গত বৃহস্পতিবার রাতে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন ছেলে মোতালেব হোসেন লিপু।
সেদিন সকাল সাড়ে ৯টায় রাবির নবাব আবদুল লতিফ হলের ডাইনিংয়ের পাশের নর্দমা থেকে লিপুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই হলেরই ২৫৩ নম্বর কক্ষে থাকতেন লিপু।
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার মকিমপুর গ্রামের বদর উদ্দীন মোল্লা ও হোসনে আরা বেগমের প্রথম সন্তান মোতালেব হোসেন লিপু। স্থানীয় মকিমপুর হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ভাটই বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে অর্থনীতি এবং পরে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে পড়ালেখা শুরু করেন।
আজ শনিবার কাঁদতে কাঁদতে লিপুর মা হোসনে আরা বলেন, পড়ালেখা শেষে সাংবাদিক হওয়ার শখ ছিল লিপুর। পূজার ছুটি শেষে গত মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে রাজশাহী পৌঁছান তিনি। পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ক্লাসে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোনে মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হয় তাঁর। এর পরদিন রাতেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন লিপু।
মোতালেব হোসেন লিপুর বোন লিমা জানান, তাঁদের বাবা ট্রাক চালিয়ে মাসের বেতনের সবটুকু তুলে দিতেন ভাইয়ের হাতে। ছেলে লেখাপড়া শিখে মানুষ হলে সংসারের সব অভাব দূর হয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করতেন তিনি।
দরিদ্র ট্রাকচালক বদর উদ্দীন মোল্লার তিন সন্তানের মধ্যে লিপু ছিলেন বড়। ছোট ছেলে লিয়নের বয়স মাত্র পাঁচ বছর।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে লিপুকে। স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া লিপুর পরিবারের এখন একমাত্র চাওয়া, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সঠিকভাবে চিহ্ণিত করে যেন যথাযথ বিচারের আওতায় আনা হয়।
এদিকে লিপু হত্যার বিচারের দাবিতে আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের আমতলায় সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।