মোগল আমলের দুই রাজার বাজি থেকে ছিটমহল
এক দেশের ভূখণ্ডে আরেক দেশের বিচ্ছিন্ন জনপদ—ছিটমহল। ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহলগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করেন ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ। হাজার হাজার মানুষের দুর্দশার এই জীবনের জন্য দায়ী মোগল আমলের দুই রাজার বাজি।
urgentPhoto
মোগল আমলে রংপুরের পাংগা রাজা ও কুচবিহারের রাজা নিজেদের অধীনে থাকা বিভিন্ন জনপদ নিয়ে দাবা ও পাশা খেলায় বাজি ধরতেন। বাজির হারজিত থেকেই রংপুরের পাংগা রাজার অধীনে যায় বর্তমান ভারতের কুচবিহার ও জলপাইগুড়ির কিছু অংশ। আর কোচ রাজার অধীনে যায় লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর কিছু অংশ।
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, বাজির দানের হারজিতে রংপুরের কিছু জনপদ কুচবিহারের রাজার অধীনে চলে যায়। একইভাবে ভারতের কিছু জনপদ রংপুরের রাজার অধীনে আসে।
মূল সমস্যা দেখা দেয় ’৪৭-এর দেশ বিভাগের সময়। মূলত এ সময়ই জন্ম হয় ছিটমহলের। স্থানীয় এলাকাবাসীর অনেকে বলেন, সাদা কাগজ বা শিটে জনপদ লিখে দেওয়া হতো বলেই এর নাম হয় ছিটমহল। তবে এ বিষয়ে ভিন্নমতও পাওয়া যায়। অনেকের মতে, ছিটকে পড়া জমিগুলোই হলো ছিটমহল।
গোলাম মোস্তফা বলেন, ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভারত ও পাকিস্তানে ভাগ হওয়ার সময় কুচবিহারের জনগণ পূর্ব পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ) সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিল। কিন্তু সেখানকার হিন্দু রাজা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হন। এতে সেখানকার রাজার কিছু জনপদ পাকিস্তানে রয়ে যায়।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মনে করেন, সীমানা নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ আইনজীবী রেডক্লিফ ছিটমহল সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা ঝুলিয়ে রাখেন। গোলাম মোস্তফা বলেন, ব্রিটিশ সরকার যদি পার্টিশনের মধ্যেকার এলাকাগুলোকে ওই দেশের অন্তর্ভুক্ত করে দিত তাহলে ছিটমহল সমস্যা থাকত না।
১৯৫২ সালে পাসপোর্ট ও ভিসা ব্যবস্থা চালু হলে ছিটমহল সমস্যা আরো প্রকট হয়ে দেখা দেয়। দেশভাগের পর থেকেই নাগরিক সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত ছিটমহলের মানুষরা সুদিনের প্রত্যাশায় আশায় বুক বেঁধে আছেন। অবশেষে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়ার মাধ্যমে অবসান হতে যাচ্ছে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার। ছিটমহলবাসী এখন অপেক্ষায় আছেন চুক্তিটি কার্যকরের।