চবি ভিসিকে প্রমাণ করতে হবে আমি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. গাজী সালেহ উদ্দিন তাঁকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন আহমেদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।
আজ সোমবার উপাচার্যের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মুক্তিযোদ্ধা ড. গাজী সালেহ উদ্দিন। উপাচার্য তাঁর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সম্মানহানি হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে সকালে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে এ মামলা করেন তিনি।
সাংবাদিকদের ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার উদ্দিন আহমেদকে প্রমাণ করতে হবে যে আমি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এ কথা প্রমাণ করার জন্য আমি মামলাটি করেছি।’
সাবেক এই ডিন আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন দেশের সাধারণ মানুষ, সাধারণ ছাত্র, শিক্ষক ও জনতা। সে সময় যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি তাঁরাই ৭৫ পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় আসেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁরা ক্ষমতাশালী। এ জন্য তাঁরা নানা ধরনের মন্তব্য করে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করছেন।
উপাচার্যের বক্তব্যে তাঁর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মানহানি হয়েছে উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘সে জানে (ইফতেখার আহমেদ) আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এক বছরের ছুটি শেষ করছি।’
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক টাকা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়েছেন অভিযোগ করেন উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ। এ সময় মঞ্চে বসা চবির সাবেক ডিন ড. গাজী সালেহ উদ্দিনকে দেখিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কি না সন্দেহের কথা জানান উপাচার্য।
সে সময় মঞ্চেই এর জবাব দেন গাজী সালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করা ভালো নয়। বিতর্ক করার প্রয়োজন নেই। মুক্তিযুদ্ধে পরিবারের রক্ত গেছে। আমি কিছু পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এখন অবসরে গেছি। আমি মুক্তিযুদ্ধ করিনি এমন প্রমাণ করতে একজন সাবেক ভিসি চেষ্টার ত্রুটি করেননি। কিন্তু সফল হননি। মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম বলে এক বছর ছুটি পেয়েছি। সার্টিফিকেট গলায় লাগিয়ে বলার দরকার নেই আমি মুক্তিযোদ্ধা।’
এ ঘটনার পর একই দিন এনটিভি অনলাইনে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘মন্ত্রী, সংসদসহ প্রভাবশালীদের ডিও লেটারের চাপে চবি ভিসি’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনটি আজ আদালতে দাখিল করেন ড. গাজী সালেহ উদ্দিনের আইনজীবীরা। ওই প্রতিবেদেনের সূত্র ধরে বলা হয়, সাবেক উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ আলমের নাগরিক স্মরণসভায় সাবেক ডিন গাজী সালেহ উদ্দিনকে প্রকাশ্যে হেয় করেছেন উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন।
এ সময় ড. গাজী সালেহ উদ্দিনের আইনজীবী সালাহউদ্দিন হায়দার সিদ্দিকী ও মুজিবুর রহমান আদালতকে বলেন, ড. গাজী সালেহ উদ্দিন আহমেদ একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তান। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সব সুযোগসুবিধা পেয়েছেন তিনি। গাজী সালেহ উদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধের সব সনদপত্র আছে। তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এটি উপস্থাপন করেছেন। এ সময় আইনজীবীরা আদালতের কাছে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদ তুলে দেন।
আদালতে নিজের বক্তব্যে মামলার বাদী ড. গাজী সালেহ উদ্দিন জানান, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা কাজ করছেন।
পরে আদালত এক মাসের মধ্যে মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন।