ভোলায় তেলসহ জাহাজডুবির ৮ম দিনে উদ্ধার অভিযান শুরু
ভোলার মেঘনায় ১১ লাখ লিটার তেল নিয়ে ডুবে যাওয়া সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি উদ্ধারে অবশেষে অষ্টম দিনে অভিযান শুরু হয়েছে। আজ রোববার (১ জানুয়ারি-২০২৩) সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। অভিযানে দুটি বার্জ, সাগর নন্দিনী-৩, সাগর বধূ-৩ ও ৪ জাহাজসহ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের ছোট-বড় জাহাজ এতে অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), জাহাজমালিক পক্ষ ও কোস্ট গার্ড কর্মকর্তারা যৌথভাবে এই উদ্ধার অভিযান পরিচালনার সময় উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে—দুর্ঘটনা ঘটল কীভাবে, তা নিয়ে। যা এড়িয়ে গেছেন তদন্তকারী দলের প্রধানসহ জাহাজমালিক পক্ষের প্রতিনিধি।
মূলত বার্জ দুটি ডুবুরিদলের সহযোগিতায় ডুবে যাওয়া জাহাজটি টেনে তুলে আনার চেষ্টা করছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রক্রিয়াটি করে যাচ্ছে মালিক পক্ষ ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
আজ সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি বার্জ দুটির মাধ্যমে আটকে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে পানির পাম্পের সাহায্যে জাহাজ থেকে পানি ফেলে দেওয়ার কাজ করা হচ্ছে।
উদ্ধার অভিযান শুরুকালে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (তদন্ত) আব্দুস ছালাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দ্রুত উদ্ধারকাজ শেষে সাগর বধূ ৩-এর সাহায্যে ডুবে যাওয়া জাহাজটি টেনে নারায়ণগঞ্জ ডকে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য সাগর বধূ-৩ জাহাজটি এনে রাখা হয়েছে। তবে কতটুকু কাজ শেষ করতে পারবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’
তদন্ত কমিটির প্রধান বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত পরিচালক মো. আব্দুর রহিম বলেন, তদন্ত শেষ হলেই প্রধান কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এর আগে তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা যাবে না। তবে সাংবাদিকদের করা চোরাই পথে তেল বিক্রি করার সময় অসাবধানবশত দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, এখন কিছু বলা যাবে না। দুর্ঘটনার শিকার অপর জাহাজ বা বলগেটের খোঁজ পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তা-ও এড়িয়ে যান তিনি।
অপরদিকে এসএইচআর নেভিগেশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মাহতাবুর রহমানের কাছে তেলের ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এটা এখন কিছুই বলা যাবে না। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যান তিনি। একই সাথে তেল পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যান তিনি। তবে পরবর্তী সময়ে বলেন, জাহাজের তেলের যে ট্যাংকার লক করে দেওয়া হয়, তার দু-একটি ভাঙা পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলেরা বলেন, এটি হচ্ছে তেলের চোরা কারবারিদের প্রধান পথ। এমন তেলের জাহাজ থেকে প্রায় প্রতিদিন ডিজেল, অকটেনসহ বিভিন্ন তেল নামানো হয় রাতের অন্ধকারে। তাদের অভিযোগ প্রশাসন বিষয়গুলো জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
দৌলতখান থানার পাশেই এসব তেল চোরাকারবারিরা ব্যবসা করে যাচ্ছে। একবার কোস্ট গার্ড চোরাই তেল ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে। যে ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে।
এদিকে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম সাহেদ সাস্তার বলেন, ‘মূলত জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর থেকেই কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন সার্বিক নিরাপত্তা এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। যাতে তেল ছড়িয়ে নদীর ক্ষতি না করতে পারে, তার জন্যই আমরা কাজ করছি।’
উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর ভোর ৪টার দিকে ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি এলাকায় মেঘনা নদীতে একটি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করে ডুবে যায় সাগর নন্দিনী-২ নামে তেল বোঝাই জাহাজটি।