কোনো অপচেষ্টায় সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না : রিজভী
সরকারের পতন ঠেকাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে অভিযোগ করে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কোনো অপচেষ্টায় সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না।’
আজ শনিবার (৮ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অবৈধ সরকার দেশকে ভয়ানক গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চায়। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়ার মতো ঘৃণ্য চক্রান্ত জনগণ রুখে দেবে। এবার কোনো অপচেষ্টায় সরকারের পতনকে ঠেকানো যাবে না। এবার সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবেই।’
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা মানবিক পরিবেশের মূল থেকে উৎসারিত হয়নি। এজন্য বহুমত ও পথকে তারা সহ্য করতে পারে না। ক্ষমতায় এসেই চিরদিন ক্ষমতায় থাকার উদগ্র লালসা তাদেরকে হিংস্র ও রক্তপিপাসু করে তোলে। তাই কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে তাদের দৃষ্টি অগ্রগামী সভ্যতার দিকে দিগন্তবিসর্পী পথে প্রসারিত না হয়ে এক নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদের অনুগামী হয়। ক্ষমতায় এসেই বারবার এই দৃষ্টান্ত তারা রেখেছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘ওরা বদ্ধ পানিতে লগি ঠেলে নৌকা বাইতে অভ্যস্ত। এরা সুস্থ সমাজ ও মুক্ত চিন্তার খরস্রোতে প্রবাহমান হওয়া বিশ্বাস করে না। তাই ক্ষমতা-ক্ষুধার অস্থিরতায় ভিন্নমত ও দলের অস্তিত্ব ধুলিসাৎ করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকে।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছি, সরকার ২০১৩-১৪ সালে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় সাজা দিতে জেলা ও মহানগরগুলোর বিচারকদের নির্দেশ প্রদান করেছে। আমরা আরও জানতে পেরেছি, সাজা দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করা হবে আগামী দুই মাসের মধ্যেই। এ বিষয়ে বিচারকদেরকে সরকারি সিদ্ধান্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলার পুলিশ সুপারদের। বিরোধীদল নির্মূলে সরকার হাতের মুঠোয় ধ্বংসের শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে। জনগণকে পরাজিত করার জন্য পর্দার আড়ালে চলছে নানা শলাপরামর্শ ও গোপন বৈঠক।’
রিজভী বলেন, “ইতোমধ্যে সরকারি অশুভ নীলনকশার কিছু আলামত ফুটে উঠেছে। দলের সিনিয়র নেতারাসহ সব স্তরের নেতাকর্মীদের বিচারের নামে আদালতে সাক্ষী হাজির করা হচ্ছে। এই সাক্ষীদের পুলিশের শেখানো বুলি বলার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। সাক্ষীরা পুলিশের হুমকির ভয়ে সাক্ষী দিতে আসে। কিন্তু, এরা এমনই গরিব মানুষ যে, বিএনপির নেতাকর্মীদের নামও শোনেননি ও চেহারা পর্যন্ত দেখেনি। এমনকি অনেক পুলিশ সদস্যদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার ভয় দেখিয়ে বিএনপিনেতাকর্মীদের নামে সাক্ষী দিতে নিয়ে আসা হয়। এদের অনেকেই আমাদেরকে বলেছেন—‘আমরা যদি সাক্ষী না দেই তাহলে চাকরি থাকবে না’।”
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যিনি নিপীড়ন ও জুলুমের পন্থা অবলম্বন করেছেন, তিনি হলেন সরকারের আস্থাভাজন ডিসি প্রসিকিউশন আনিছুর রহমান। তিনি উদ্বুদ্ধ আওয়ামী দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কারান্তরীণ সাইফুল ইসলাম নিরব, রফিকুল আলম মজনু, মোনায়েম মুন্না, এস এম জাহাঙ্গীর, ইউসুফ বিন জলিল, গোলাম মাওলা শাহিন ও আজিজুর রহমান মুসাব্বিরসহ অসংখ্য নেতা আজ ডিসি প্রসিকিউশনের অন্যায়, অন্যায্য হস্তক্ষেপের কারণে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। উল্লিখিত নেতাদের ব্যাকডেট দিয়ে পেন্ডিং মামলায় নাম দিয়ে আটকে রাখার মূল নায়কই হচ্ছেন ডিসি প্রসিকিউশন। এমনও শোনা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম শুনলেই ডিসি প্রসিকিউশন নাকি তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। সরকারের প্রতি দপ্তরেই আওয়ামী গেস্টাপো বাহিনী মনুষ্যত্বহীন এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। বিরোধীদল বিদ্বেষী ডিসি আনিছুর রহমান বিএনপিকে নির্মূল করার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করছেন। এসব কর্মকর্তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে আগ্রহী নয়। তারা দেশে-দেশে ফ্যাসিবাদের পতনের পরিণাম থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেননি। এরা দুষ্কর্ম করেও পার পাচ্ছে বলেই নিজেদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন। তাদের আমি নুরেমবার্গ ট্রায়ালের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। জনগণ সবকিছু খেয়াল করছে। জনগণ এখন সবদিক থেকে প্রস্তুত। শেখ হাসিনার একক জবরদস্তি শাসনের আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিদায়ের বাঁশি বেজে উঠবে।’
রিজভী বলেন, ‘সারা দেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী দিয়ে হামলা ও মামলার বিবরণ তুলে ধরে বলেন, গতরাত ৯টা ১৫ মিনিটে লাকসাম পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হক ছাদেককে তার বাড়ির উত্তর পশ্চিম গায়ের উত্তর পাড়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করেছে। ৫নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা রাশুর নেতৃত্বে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত হামলা চালায়। এছাড়া আগামীকাল (রোববার) সিলেটে তারুণ্যের সমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে হবিগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের লিফলেট বিতরণ করার সময় হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মর্তুজা ও এএসপি সদর সার্কেল খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ হামলা করে এবং লিফলেট বিতরণে বাধা সৃষ্টি করে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।