সুখী দেশের সূচকে সাত ধাপ অগ্রগতি দেশে গণতন্ত্রের প্রমাণ : তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিশ্ব গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ এবং সুখী দেশের সূচকে আমাদের সাত ধাপ অগ্রগতি প্রমাণ করে যে দেশে গণতন্ত্র সংহত হয়েছে, সুশাসন রয়েছে। আজ সোমবার (১০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক ও নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চেক বিতরণ করেন। তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ধারণাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত। তিনিই প্রথম জাতীয় প্রেসক্লাবে ঘোষণা দেন যে মাঝেমধ্যে সহায়তা দেওয়ার চেয়ে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো উত্তম। তার সেই চিন্তা থেকেই প্রথমে কল্যাণ তহবিল গঠন ও তারপর সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠিত হয়। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আজকে সত্যিকার অর্থে দেশে যে সমস্ত সাংবাদিক কষ্টে থাকেন, দুর্ঘটনায় পড়েন কিংবা নিহত হন, তাদের ও পরিবারের জন্য একটি ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও’র যাত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই শুরু হয়েছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০০৮ সালে ছিল ১০টি টেলিভিশন, এখন ৩৫টি টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে আরও সাত থেকে আটটি সম্প্রচারের অপেক্ষায়। ৪০০ দৈনিক পত্রিকা ছিল ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, এখন সাড়ে এক হাজার ২০০ দৈনিক পত্রিকা। সম্প্রচার হচ্ছে বেসরকারি এফএম ও কমিউনিটি রেডিও, প্রকাশিত হয় হাজার হাজার অনলাইন পত্রিকা। গণমাধ্যমের এই যুগান্তকারী বিকাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের গণমাধ্যমবান্ধব নীতির কারণেই সম্ভব হয়েছে।’
গণমাধ্যমের এই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রের বিকাশও ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, প্রতিনিয়ত সকাল-বিকাল-সন্ধ্যাবেলায় বিরোধী দল বিশেষ করে মির্জা ফখরুল সাহেবসহ তাদের নেতারা বলেন—আমাদের কথা বলার অধিকার নেই। তারা তিনবেলা কথা বলে বলেন—আমাদের কথা বলার অধিকার নেই। তাদের এই হাঁকডাক এবং গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন মন্তব্যের মধ্যেই বাংলাদেশ গত বছর গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ এগিয়ে ৭৫তম থেকে ৭৩তম স্থানে উন্নীত হয়েছে।’
আর সুখী দেশ সূচকে আমরা সাত ধাপ এগিয়েছি উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সুখী সূচকে ভারত, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে আমাদের অবস্থান এখন ৯৪তম। ভারতের অবস্থান ১৩৬তম, পাকিস্তানের ১২১তম, শ্রীলংকার অবস্থান ১২৭তম। আমাদের অবস্থান ৯৪তম। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুশাসনের প্রমাণ, গণতন্ত্রের অভিযাত্রার প্রমাণ।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে গণমাধ্যম অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে, প্রয়োজন দায়িত্বশীলতার। আধুনিক গণতন্ত্রের সূতিকাগার যুক্তরাজ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যেমন আছে, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতাও আছে। সেখানে একটি অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে ১৩০ বছর চলার পর বিশ্বখ্যাত পত্রিকা নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড বন্ধ হয়ে যায়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের একজন এমপির বিরুদ্ধে ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিবিসির পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। কদিন আগে বিবিসির মহাপরিচালককে পদত্যাগ করতে হয়েছে। যুক্তরাজ্যে টেলিভিশন এবং পত্রিকায় অসত্য বা ভুল সংবাদ বা কারও ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশের কারণে সেই গণমাধ্যমকে মোটা অংকের জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশে ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে কোনো পত্রিকা বন্ধ হয়নি, কোনো টেলিভিশনের পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সরকারের নীতি অনুযায়ী, গণমাধ্যম অবাধ এবং স্বাধীনভাবে কাজ করে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গণমাধ্যমের কাছে আমার একটি বিনীত নিবেদন-স্বাধীনতার পাশাপাশি দায়িত্বশীলতার প্রতি আমাদের সচেতন থাকতে হবে। তাহলেই গণতন্ত্র সংহত হবে, দেশ এগিয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় দেশ পৌঁছাবে।’
উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৪২ জন সাংবাদিকের অনুকূলে ট্রাস্ট থেকে ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং দুই হাজার ২৯৮ জনকে প্রধানমন্ত্রীর করোনাকালীন বিশেষ সহায়তা হিসেবে দুই কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।