স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহিংসতা ও সন্ত্রাস উসকে দিচ্ছেন : রিজভী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, তবে কর্মসূচির নামে রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উক্ত বক্তব্য উসকানিমূলক এবং নিজের দলের সন্ত্রাসীদেরকে আশকারা দেওয়ার শামিল।”
রিজভী বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, বিএনপির কর্মসূচি পূর্বঘোষিত, অথচ একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তিসভা কিংবা শান্তি মিছিল করলে তখন কি জনদুর্ভোগ হয় না? বিএনপির কর্মসূচির দিন কেন আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করে? কেন আওয়ামী লীগ ৭১ এর শান্তি কমিটির মতো শান্তি সমাবেশ বা শান্তি মিছিল করে? এটি করার উদ্দেশ্য—বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মীদের বাধা প্রদান করা, হামলা করা এবং তাদেরকে হত্যা ও জখম করা।’
রিজভী আরও বলেন, ‘বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-কর্মসূচির ওপর সরকারি দলের সন্ত্রাসীদেরকে ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। দেশের জেলা সদর ও মহানগরসহ হাটবাজার—গঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘জনগণের আস্থাহীন এই অবৈধ সরকার সন্ত্রাস, হামলা এবং মামলার এক শৃঙ্খল তৈরি করে দেশের জনগণকে বন্দি করে রেখেছে। গণতন্ত্রকে অন্ধকার কূপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আসলে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বহুমত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা শুনলেই আওয়ামী লীগ মূর্ছা যায়। আওয়ামী নীতিনির্ধারকরা দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নির্মূল করে নব্য বাকশালী ক্ষমতা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার মতলব আঁটছে। সেই কারণে বিএনপির গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর হামলা চালিয়ে তারা একটি সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়া, রক্তাক্ত হামলা চালানো প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ সরকারি সন্ত্রাসীদের পক্ষে পক্ষপাত দেখায় অথবা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। আর এই ভয়ংকর সর্বনাশা সহিংস সন্ত্রাসের জন্য দায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রটেকশনেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা রক্তাক্ত হামলায় মেতে ওঠে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘২২ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপির ২৭ জুলাই মহাসমাবেশের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়ার পরপরই যুবলীগের ২৪ জুলাইয়ের সমাবেশ পরিবর্তন করে ২৭ জুলাই করা হলো কেন? এর কী জবাব আছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে? অশুভ উদ্দেশ্য নিয়েই যুবলীগের সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশে গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলা ও মৃত মানুষের নামে মামলা দেওয়া হচ্ছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অপরিণামদর্শী ও অবিমৃশ্যকারী; তার এই বক্তব্য দিনকে দিন সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। জনজীবনে বিদ্যমান অশান্তি ও দুর্ভোগের জন্য দায়ী ভোটারবিহীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরা ক্ষমতায় থাকলে কখনোই দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবেশ ও নির্বাচনের মাঠ শান্তিপূর্ণ থাকে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আগামী ২৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে বিএনপির উদ্যোগে আগামী ২৭ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ সফল ও সার্থক করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিএনপির একদফা দাবির সঙ্গে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণ সমর্থন জানিয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ঢল নামবে।’
এ সময় হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শেখ রবিউল আলম রবি, সাইফুল আলম নিরব, মিয়া নুর উদ্দীন অপু, রফিকুল আলম মজনু, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, আলী আকবর চুন্নু, এস এম জাহাঙ্গীর, ইউসুফ বিন জলিল, কামাল উদ্দিন, গোলাম মাওলা শাহিন, আজিজুর রহমান মুসাব্বিরসহ আটক নেতাদের মুক্তি দাবি করেন রিজভী।
১৮ ও ১৯ জুলাই পদযাত্রা এবং ২২ জুলাই ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আহত, নিহত ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংখ্যা জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘আহত প্রায় চার হাজার ১০০ জনের বেশি, নিহত দুজন। এছাড়া গত ১৯ মে হতে এ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ৩১৫টি মামলা, এক হাজার ৩৫০ জনকে গ্রেপ্তার এবং এক হাজার ২০০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন উপস্থিত ছিলেন।