সাবেক যুবলীগনেতার বিরুদ্ধে নির্বাহী প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকির অভিযোগ!
অব্যাহতিপ্রাপ্ত এক যুবলীগনেতা দলবল নিয়ে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন। এ সময় ওই যুবলীগনেতা জোরপূর্বক ঠিকাদারি কাজ দাবি করেন। কাজ না দিলে নির্বাহী প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে পাবনা গণপূর্ত বিভাগ ক্যম্পাস ও নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বেলা পৌনে ১টার দিকে জেলা যুবলীগ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতা শেখ লালু দলবল নিয়ে আমরা কক্ষে আসেন। তিনি কোনো কথা-বার্তা ছাড়াই অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। নিজের প্রভাব ও ক্ষমতার কথা জানিয়ে আগামীতে বড় কাজ না দিলে অফিসে আসতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন। এ সময় আমি অনৈতিক প্রক্রিয়ায় কাজ দেওয়া সম্ভব না জানালে মারমুখী আচরণ করেন এবং ফাইলপত্র আছরে তাণ্ডব চালান। পরে, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাজে আসা ঠিকাদাররা তাঁকে বের করে নিয়ে যান। পরে পুলিশ ও র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় আমি ভীত নই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঘটনার সময় নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে আলাপরত ছিলেন ঠিকাদার তুষার হোসেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমরা একটি বকেয়া বিলের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আলাপ করছিলাম। এ সময় হঠাৎ শেখ লালু, লারা, জাহিদসহ ছয় সাতজনের একটি দল নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে এসে ধমকাতে শুরু করেন। তাঁরা স্থানীয় এক নেতার অনুসারী দাবি করে ঠিকাদারি কাজ কেন দেওয়া হচ্ছে না, তা জানতে চেয়ে গালাগাল শুরু করেন। এ সময় লালু দম্ভের সঙ্গে বলেন, ‘কাজ না দিলে ফলাফল ভয়াবহ হবে। আগে পাঁচটা এক্সেন খাইছি। তোরেও খাইতে সময় লাগবে না। এমপি, ডিআইজি কাউকে বলে লাভ হবে না।’ এ সময় আমরা তাঁকে থামানোর চেষ্টা করলে আমাদের উপর চড়াও হন। বাইরে নিয়ে মারধর করেন। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।’
ঠিকাদার তুষার আরও বলেন, ‘শেখ লালুর গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারি লাইসেন্স নেই। এর আগেও গণপূর্ত বিভাগে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেছেন। এভাবে চলতে থাকলে, পেশাদার ঠিকাদারদের এখানে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই ঘটনার সব জানা যাবে বলেও জানান ঠিকাদার তুষার হোসেন।
গণপূর্ত বিভাগের প্রধান সহকারী আব্দুস সালাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দুপুরে হঠাৎ করেই মারামারি দেখে অফিসে থাকা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। স্যারের কক্ষে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’
অভিযুক্ত ঠিকাদার শেখ লালুর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল সব কাজে পক্ষপাতিত্ব করেন। একজন নিয়মিত ঠিকাদার হিসেবে গণপূর্ত বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে গিয়েছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে তাঁর পছন্দের ঠিকাদার তুষার আমার সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর হামলা করেন। আমরা কাউকে মারধর করিনি বরং অনিয়মের প্রতিবাদ করে লাঞ্ছিত হয়েছি।’
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমরান মাহমুদ তুহিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ সুপার স্যার তদারকি করছেন।’
পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গণপূর্ত দপ্তর থেকে খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ফোর্স পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ ধরনের ঘটনাকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে ২০২১ সালের ৬ জুন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য শেখ লালু, হাজি ফারুকসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগনেতা গণপূর্ত অফিসে ঠিকাদারি কাজে প্রভাব বিস্তার করতে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। সেই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে জেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেয় জেলা যুবলীগ।’