সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাল টাকা বিক্রি, গ্রেপ্তার ৪
জাল নোট তৈরি, সরবরাহ ও বিক্রির অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাতে রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ ও ডেমরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাবের দাবি, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সক্রিয় একটি চক্র। এ চক্রটি এ পর্যন্ত দুই কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছেড়েছে। তারা জাল টাকা ছড়াতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আসছিল।
আজ বুধবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—মোহাম্মদ আমিনুল হক ওরফে দুলাল (৪৩), আবদুর রাজ্জাক ওরফে দিদার (৩০), সুজন আলী (৪০) ও মোহাম্মদ সাকিবুল হাসান (২১)। অভিযানে প্রায় অর্ধকোটি টাকার জাল নোট ও নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রটির মূল হোতা আমিনুল। অন্যরা তার সহযোগী। আমিনুল এক সময় রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি অনলাইনে জাল নোট তৈরি করা শেখেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হওয়া কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি জাল নোট তৈরি ও বিক্রির চক্র গড়ে তোলেন। ‘জাল নোট বিক্রি করি’, ‘জাল টাকা সেল’, ‘জাল টাকা বেচি’—এমন সব নামে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজ-গ্রুপ খুলে তারা জাল নোটের কারবার চালিয়ে আসছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমিনুল জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করতেন। তিনি নিজে জাল নোটের ডিজাইন ও ছাপার কাজ করতেন। পরে, তা সহযোগী দিদারকে দিতেন। দিদার চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে জাল নোট কাটিং ও বান্ডিল করতেন। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গ্রাহক তৈরি করতেন। তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতেন। পরে, তাদের সুবিধাজনক স্থানে জাল নোট সরবরাহ করতেন। যখন ব্যবসা রমরমা থাকত, তখন চক্রটি দিনে দুই থেকে তিন লাখের বেশি টাকার জাল নোট তৈরি করত। চক্রটি এক লাখ টাকার জাল নোট ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করত।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া দিদার হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি তৈরি পোশাকের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পর অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় জাল নোট চক্রে যুক্ত হন। চক্রের সদস্য সুজন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি এলাকায় জুতার দোকান করতেন। ব্যবসায় ক্ষতির পাশাপাশি তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং পরে, ঢাকায় চলে আসেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। জাল নোট ছাপার পর দিদারের সঙ্গে তা কাটিং ও বান্ডিল করতেন তিনি। পরে, গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করতেন। চক্রের সদস্য সাকিবুল রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতেন। তিনি মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, চক্রটির সদস্যরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট সরবরাহ করতেন। এ ছাড়া মাছবাজার, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে জাল নোট সরবরাহ করতেন। তারা বিভিন্ন উৎসবের সময় বিপুল পরিমাণ জাল নোট ছাপাতেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তারা জাল নোট ছাপার পর অব্যবহৃত কাগজসহ অন্যান্য অংশ পুড়িয়ে ফেলতেন।