ড. ইউনূসের মামলা স্থগিতের সঙ্গে নির্বাচনের যোগসূত্র কোথায়, প্রশ্ন কাদেরের
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর ফাঁকি ও শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাতের মামলা স্থগিত চেয়ে আসা বিবৃতিতে কেন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলো, এমন প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দুটি বিষয়ের যোগসূত্র কোথায়?’ আজ বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের আয়োজনে সমাবেশের একদিন আগে মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই বিবৃতির দুইটা পার্ট আছে। একটা পার্ট হচ্ছে তার বিরুদ্ধে যত মামলা সব স্থগিত করে দিতে হবে। মানবিক কারণেও না। স্থগিত করে দিতে হবে। এই স্পেসটা কিনতে দুই মিলিয়ন ডলার লেগেছে। যে স্পেসে বিবৃতি এসেছে পত্রিকাতে, সেখানে এই টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এ রকম বহু খরচই করেন, যেগুলোতে তার আয়ের সাথে ব্যয়ের কোনো সংগতি আমরা দেখতে পাই না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শ্রমিকরা এখানে মামলা করেছে। আওয়ামী লীগ করেনি। অর্থ আত্মসাৎ এবং কর ফাঁকি দেওয়ার কারণে মামলা। এখন আমাদের দেশে কি কোনো আইনের শাসন বা বিচার ব্যবস্থা নেই যে, কেউ এই ধরনের কর্মকাণ্ড করলে এ নিয়ে মামলা হবে না? এই ধরনের অভিযোগের বিচার হবে না? কেন এটা স্থগিত করতে হবে?’
নোবল বিজয়ী হলে অপরাধ করলেও তিনি পার পেয়ে যাবেন কি না—এমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যদি এ নিয়ে তাদের কোনো সংশয় থাকে তাহলে অভিজ্ঞ বা এক্সপার্ট পাঠাতে পারেন বাংলাদেশে, তদন্ত করুক। তথ্য-উপাত্ত বের করুক এর মধ্যে কী আছে, মামলা জাস্টিফাইড কি না—এটা করতে পারে। কিন্তু মামলা স্থগিত করতে হবে, এটা কোন আইন? এতো বড় বড় নেতা নোবেল জয়ীরা কি অপরাধ করে থাকলে পার পেয়ে যাবেন?’
ড. ইউনূসের মামলা স্থগিতের সঙ্গে বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ কেন এলো সেই প্রশ্নও রাখেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যোগসূত্র কোথায়? ইউনুস সাহেবের বিষয়টি কর ফাঁকি ও গরিবের অর্থ আত্মসাৎ। এর সঙ্গে একই বিবৃতিতে নির্বাচনের বিষয়টি আসবে কেন?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পৃথিবীর দেশে দেশে নির্বাচন হচ্ছে। আমরা এও তো দেখেছি দুটি ডেমোক্রেসি কনফারেন্সে যাদের রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক জীবনে গণতন্ত্রের গ-ও নেই, তারাও দেখলাম আমন্ত্রিত। গণতন্ত্রের সম্মেলনে গণতন্ত্র বিরোধীরা অনেকেই আমন্ত্রণ পেল। পাকিস্তান গণতন্ত্রের জন্য ভাল অভিজ্ঞতা না। তারপরও পাকিস্তান দুই দুইবার গণতন্ত্রের সম্মেলনে আমন্ত্রিত।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র না থাকলেও বা সামরিক বাহিনী গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করলেও সেখানে বিশ্ব মোড়লদের কোনো ‘ভিসা নীতি’ বা কোনো পদক্ষেপ কেন নেই—সেই প্রশ্নও রাখেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় সম্প্রতি জিম্বাবুয়ের নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের (ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেস্ট) বিরুদ্ধে চারটা মামলা হয়েছে। সিএনএনের বক্তব্য, যতো মামলা হচ্ছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ততো বাড়ছে। আমাদের নির্বাচন হবে আমাদের সংবিধান অনুযায়ী। আমরা বলেছি, অবাধ নির্বাচন আমাদের লক্ষ্য, এটা আমাদের কমিটমেন্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা বারবার বলেছেন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তারুণ্যের প্রতিবাদের ধ্বনি উচ্চারিত হবে।’
দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে ছাত্র সমাবেশ থেকে তার প্রতিবাদ ধ্বনি উচ্চারিত হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্রসমাবেশ হবে। আগামীকালের সমাবেশ মূলত শোক দিবসকে কেন্দ্র করে। প্রতিবছরই ছাত্রলীগ ৩১ আগস্ট এই প্রোগ্রামটি করে থাকে। এটা আরও ছোট পরিসরে হয়ে থাকে। এবার আমাদের দীর্ঘদিন ধরে কোনো বড় আকারে ছাত্রসমাবেশ করা হয়নি। তা ছাড়া নেত্রীর সময়ের ব্যাপারও আছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আগামীকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা স্মরণে এই ছাত্র সমাবেশ হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সারা বাংলাদেশ থেকে তারুণ্যের যে ঢল নামতে শুরু করেছে, তাতে এটা স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশে পরিণত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এটা আমাদের তারুণ্যের অভিযাত্রা হবে।’
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, উত্তরের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম, দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু উপস্থিত ছিলেন।