ফ্রান্স আবারও আপনার পাশে থাকবে : শেখ হাসিনাকে ম্যাক্রোঁ
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য তার দেশের অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, “আমি এই ইস্যুতে আপনার নেতৃত্বের প্রশংসা করতে চাই। আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য প্রধানত দায়ী দেশগুলোকে বোঝানো এবং এ বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করার ব্যাপারে আপনি ফ্রান্সের উপর নির্ভর করতে পারেন। ফ্রান্স আবার আপনার পাশে থাকবে।’
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় ম্যাক্রোঁ এ মন্তব্য করেন।
ম্যাক্রোঁ জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ফ্রান্সের পূর্ণ সমর্থনের উপর নির্ভর করতে পারে।
কাউকে ধমক দেওয়া বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এমন বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘নতুন সাম্রাজ্যবাদের মুখোমুখি একটি অঞ্চলে, আমরা তৃতীয় উপায় প্রস্তাব করতে চাই। আমাদের অংশীদারদের ধমক দেওয়ার বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাদের ওপর এমন কোনো স্কিম চাপানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়।’
তার বক্তৃতার সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত থেকে একটি লাইনও পরিবেশন করেন- ‘চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায়ে বাঁশি।’
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’থেকে ম্যাক্রোঁর গাওয়া লাইন কয়টির ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নেটিজেনদের মন জয় করছে।
তার সফরের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে ম্যাক্রোঁ উল্লেখ করেন, ‘ফ্রাঁসোয়া মিটাররান্ডের সফরের তিন দশকেরও বেশি সময় পরে, আমরা আমাদের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করছি। ফ্রান্সকে সম্মান করার জন্য এবং আপনার আমন্ত্রণে পুরো ফরাসি প্রতিনিধি টিমকে সম্মান জানানোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী ম্যাক্রোঁকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।
রাতে ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ফ্রান্স কৌশলগত সম্পদ ও উন্নত প্রযুক্তিতে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করছে। ফ্রান্স স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী। আমরা দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণের উপর মনোযোগ দিয়ে একটি শক্তিশালী বাণিজ্য অংশীদারত্ব গড়ে তুলেছি। আমরা কৌশলগত সম্পদ এবং উন্নত প্রযুক্তিতে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত করছি।’
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের নভেম্বরে তার ফ্রান্স সফরের সময় এলিসি প্রাসাদে (ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন) যে উষ্ণ আতিথেয়তা পেয়েছিলেন তার কথা স্মরণ করেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এখানে আপনাকে এবং আপনার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরাসি বিপ্লবের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ফ্রান্স আমাদের হৃদয়ে ও অন্তরে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আপনাকে আমাদের অনন্য কাচ্চি বিরিয়ানির স্বাদ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের উভয় জাতিই আমাদের রন্ধনপ্রণালী, সংস্কৃতি ও ভাষাগত ঐতিহ্যের জন্য অত্যন্ত গর্বিত। আমাদের দুই জনগোষ্ঠীকে একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য আমাদের দুটি সংস্কৃতির মধ্যে আরও ইন্টারফেস ও ফিউশন প্রচার করার সময় এসেছে।’
৩৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আজ সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই নেতার মধ্যে শীর্ষ বৈঠক হবে। এছাড়াও আজ তারা কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই প্রত্যক্ষ করবেন এবং একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিং করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আজ সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান ম্যাক্রোঁ। দুপুর ২টাযর দিকে ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্টের।