ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
সব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে আগামী দিনের অগ্রযাত্রায় সবাইকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথে আমরা এগিয়ে যাব অগ্রগতির দিকে, উন্নয়নের দিকে।’
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম শুভ জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে ইছামতি নদীতে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাব অগ্রগতির দিকে, উন্নয়নের দিকে। সব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে আমরা সেই অগ্রযাত্রায় শামিল হব।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নৌকাবাইচ আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির একটি অনন্য ঐতিহ্য। বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে লোকসংস্কৃতির বহু অমূল্য উপাদান। এসব লোকসংস্কৃতি সঠিকভাবে লালন করা গেলে এগুলো বিশ্ব সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেকেই বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যারা চেষ্টা করেছেন, তারা বার বার ব্যর্থ হয়েছেন।’
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে বাঙালি সংস্কৃতির সৃষ্টি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। ৭০ এর নির্বাচনে জয় ও স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক, এ কথা বলতে কোনা দ্বিধা নেই। স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব অর্থহীন।’
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পাবনা জেলা বাঙালি লোকসংস্কৃতির উর্বর ক্ষেত্র। এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেন। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির অনেক দিকপাল ও কীর্তিমানের জন্ম এ জেলায়। আমরা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। নৌকাবাইচ আমাদের এলাকায় তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় উন্নত, সমৃদ্ধ ও অমলিন। বাংলার আকাশে বাতাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আমাদের সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এগুলোর সঠিক পরিচর্যা আমাদের সংস্কৃতিকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের ঐতিহ্য। ঈদ, পূজা, পার্বণ ও অন্যান্য সব ধর্মীয় উৎসব এবং মৌসুমি ও ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণই আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশে পরিণত করেছে। বিশেষ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্যের উজ্জ্বল স্বাক্ষর। এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আমাদের যেকোনো মূল্যে এগিয়ে নিতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির বর্তমান যুগে দেশীয় লোকসংস্কৃতি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এমতাবস্থায় নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি নৌকাবাইচ, পুতুল নাচ, জারি-সারি, ভাওয়াইয়া গান, গ্রাম্য মেলা, নানাবিধ উৎসব তুলে ধরতে হবে।’
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতি জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়, তবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্থনীতির নেতিবাচক পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। পাবনার উন্নয়নেও নতুন গতি এসেছে। ২০০৮ সালে পাবনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও এতদিন কোনো হাসপাতাল ছিল না। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেই পাবনায় ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণকাজের শুভ সূচনা করা হয়েছে। পাবনা থেকে রেল চলাচল এ মাসেই শুরু করার কথা থাকলেও প্রশাসনিক ও কারিগরি কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে, অল্পদিনের মধ্যে পাবনা থেকে রেল চলাচল শুরু হবে, ইনশাআল্লাহ। এছাড়া পাবনার প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদীর সংস্কার ও পুনরুদ্ধারের জন্য একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে।’
‘উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উন্নয়ন তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর সঙ্গে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা থাকে। তাই পাবনার উন্নয়নের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের কারণে আমরা বিভিন্ন মত ও পথের অনুসারী হতে পারি, কিন্তু পাবনার উন্নয়নে আমরা এক ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। এটাই জনগণের প্রত্যাশা।’
ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতির পত্নী ড. রেবেকা সুলতানা। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু।
অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, বেড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভার উদ্যোগে ইছামতি নদীতে গত ২২ সেপ্টেম্বর সপ্তাহব্যাপী নৌকাবাইচের উদ্বোধন করা হয়। বৃহস্পতিবার প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বাগচী চ্যালেঞ্জার্স নামের নৌকা চ্যাম্পিয়ন ও শারিরভিটা এক্সপ্রেস নৌকা রানার্সআপ হয়। এ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন শিশুসহ সব বয়সের বহু মানুষ।