ওবায়দুল কাদেরের ‘হুঙ্কার’ টিক্কা খানের সাথে তুলনা রিজভীর
বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ‘হুঙ্কার’ টিক্কা খানের সাথে তুলনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে আজ রোববার (৫ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী এই মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, সারা দেশে চলছে ‘গ্রেপ্তার ঝড়’। সেই গ্রেপ্তারে তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কাউকে আপনারা (ওবায়দুল কাদের) রেহাই দিচ্ছেন না। আর মুচকি মুচকি হাসি দেন… অট্টহাসি দেন… ওবায়দুল কাদের সাহেব যে, কোথায় বিএনপির নেতারা। আর গুহা থেকে নাকি আমরা প্রেস বিফ্রিং করি। তো এই ধরনের কথা তো টিক্কা খানেরাও (মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রধান) বলতেন। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ যখন তারা করলো ২৫ মার্চ, করার পরে তারা যখন দখল নিয়ে নিলো… তখন দেশের লোক তো আর প্রতিবাদ করতে পারিনি সামনা-সামনি… তাদেরকে সরে যেতে হয়েছে নিজের বাসা থেকে, বাড়ি থেকে গ্রামে যেতে হয়েছে, না হলে দেশের সীমানা পার হতে হয়েছে। যখন এই টিক্কা খানরা, নিয়াজীরা তারা ঠিক একই ধরনের কথা বলেছে… মুক্তিযোদ্ধাদের তারা দুস্কৃতকারী বলেছে। আজকে ঠিক একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব... যে কোথায় বিএনপি নেতারা?... গুহা থেকে প্রেস ব্রিফিং করছে।
বর্তমান পরিস্থিতিকে একাত্তর সালের অবস্থার সাথে তুলনা করে রিজভী বলেন, একাত্তরে যে পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল এখন সেই একই রকম পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। আজকে টিক্কা খানের ভূমিকা অবলম্বন করেছেন, নিয়াজীর ভূমিকা অবলম্বন করেছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবরা এবং সেই ভূমিকা দিয়েই বাংলাদেশের মানুষকে রক্তাক্ত করছে, সারা দেশকে বিরোধী দল শূন্য, বিএনপি শূন্য করার তারা প্রক্রিয়া নিয়ে এগুচ্ছেন।
রিজভী বলেন, তারা (সরকার) এক নিশ্চুপ নিস্তব্ধ একটি পরিবেশে একটা নির্বাচনের নামে তামাশা করবেন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) শেখ হাসিনা যে তালিকা ধরিয়ে দেবেন, সেই তালিকা অনুযায়ী বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন। আমি যেটা বলতে চাই, দুস্যদলের মুক্তিপণ আদায়ের যে কাহিনিগুলো আমরা পড়ে থাকি সেই কাহিনিগুলো চলছে। আওয়ামী সরকার ও তাদের প্রশাসন ঠিক একই কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জে এক ডাক্তারকে না পেয়ে তার দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যায় এবং তারপর তারা বার্গেনিং করে… বার্গেনিং করার পরে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে দুই ভাইকে ছেড়েছে। ওই ডাক্তার বিএনপি করে বলে তাকে পুলিশ না পেয়ে তার দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যায়…. বাছ বিচারহীনভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জে মেট্রিক পরীক্ষার্থী তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। আজকে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসছেন তারা ঠিক ভয়ংকর দুস্যদলের মতো। তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, গ্রেপ্তারের হিড়িক… আর কাউকে ধরছে… মুক্তিপণ আদায় করছে টাকার বিনিময়ে ছাড়ছে, আবার কাউকে টাকা নিয়েও ছাড়ছে না… এই রকম পরিবেশের মধ্য দিয়ে দেশ চলছে।
বিএনপির এই নেতা আরওে বলেন, অবরোধ কর্মসূচি চলছে। এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে আগামীকাল দিন ও রাতে … মঙ্গলবার ভোর ৬টায় অবরোধ শেষ হবে। এরপর আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা সকল নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি… নানা ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করবে সরকার, সৃষ্টি করে দায় চাপাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপরে। এজন্য আমি বলতে চাই, আমাদের নেতাকর্মীরা, সহযোগী-অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আপনারা প্রত্যেকে সজাগ থেকে শুধু জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করে রাস্তায় নামবেন। অবরোধ কর্মসূচি যেটা চলছে যেটা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে যাবেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে পুলিশ ২৬১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে, নয়টি মামলায় আসামি করা হয়েছে এক হাজার ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে। এই তথ্য জানিয়ে রিজভী বলেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৭৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট ৫১৫টির অধিক মামলায় আসামির সংখ্যা ৩৯ হাজার ৬২০ জনের অধিক নেতাকর্মী। এই সময়ে মৃত্যু ১০ জন এবং আহত ৫৭৯১ জনের অধিক নেতাকর্মী।