বিচার বিভাগ নিয়ে মিডিয়ায় ‘ফ্রি স্টাইলে’ সমালোচনা হয় : আপিল বিভাগ
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘প্রকৃত সত্য না জেনে কিছু হলেই বিচার বিভাগ ও বিচারকদের নিয়ে গণমাধ্যমে ফ্রি স্টাইলে সমালোচনা করা হয়। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো চরিত্রহননের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।’ আপিল বিভাগ বলেন, ‘বিচারকরা সমালোচনার জবাব দিতে পারেন না। বিচারকদের নিজেদের ডিফেন্ড করারও সুযোগ নেই। আদালতের হাত লম্বা হলেও সবকিছু করা যায় না। তাই বিচার বিভাগের এবং বিচারপতিদের মর্যাদা রক্ষায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ভূমিকা রাখতে হবে।’
কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক সোহেল রানার হাইকোর্টে সাজার বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) এ মন্তব্য করেন।
আদালতে সোহেল রানার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক শুনানি করেন।
শুনানির এক পর্যায়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘বিচারক সোহেল রানাকে সকালে হাইকোর্ট এক মাসের সাজা দিলেন। দুপুরে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ জামিন দিলেন। বিকেলে চেম্বার আদালত সাজা স্থগিত করলেন। সবই আইনের বিধান মতে হয়েছে। এখানে আইনের ব্যত্যয় হয়নি। এটা আইনজীবীরা সবাই জানেন। অথচ, অনেক গণমাধ্যমে হেডলাইন করা হলো ‘‘বিচারকের সকালে সাজা, দুপুরে জামিন, বিকেলে সাজা স্থগিত’’!’
এই বিচারপতি বলেন, ‘আইনের মধ্যে থেকে আদেশ দিলেও গণমাধ্যমে ফ্রি স্টাইলে সমালোচনা চলল। এতে সাধারণ মানুষের কাছে একটা ভুল বার্তা গেল। বিচারপতিরা তো নিজেদের ডিফেন্ড করতে পারেন না। সমালোচনার জবাব দিতে পারেন না। এসব ক্ষেত্রে তো আইনজীবীদের, সুপ্রিম কোর্ট বারকে বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষায় ভূমিকা রাখা উচিত। বারের কে সভাপতি, কে সম্পাদক সেটা দেখার বিষয় নয়, সব আইনজীবীকে বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আদালতকে সম্মানের সঙ্গে না দেখা দুর্ভাগ্যজনক। আদালতের হাত লম্বা হলেও সবকিছু করা যায় না। এ কারণে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ভূমিকা রাখতে হবে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের দায়িত্ব অনেক। বিচার বিভাগ ও বিচারকদের মর্যাদা রক্ষায় আইনজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।’
এর আগে আপিল বিভাগের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান বিচারক সোহেল রানা। তবে, হাইকোর্টে আগের দেওয়া আবেদনে বিচারক সোহেল রানা ‘লঘু পাপে গুরু দণ্ড যাতে না দেওয়া হয়’ উল্লেখ করায় এর কঠোর সমালোচনা করেন আপিল বিভাগ। এ সময় প্রধান বিচারপতি তার আইনজীবীদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যে বিচারক জানেন না বোঝেন না, তাদের জুডিশিয়ারিতে রাখা উচিত কি না?’
বিচারকের পক্ষের আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী বলেন, ‘আপনারা সব বিচারকের অভিভাবক। তিনি ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাকে ক্ষমা করে দিয়ে একজন ভালো বিচারক হওয়ার সুযোগ দেবেন, এটাই আমাদের আবেদন।’
পরে আপিলের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল মঙ্গলবারের দিন ধার্য করেন আদালত।
গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেল রানার সাজার রায় ২০ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে শুনানির জন্য বিষয়টি আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তিনি তার খাস কামরায় এ আদেশ দেন।