নির্বাচনবিরোধী সহিংস কর্মকাণ্ড প্রশ্রয় দেব না : ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কোনো সহিংসতায় জড়ালে নির্বাচন কমিশন যে আইনি পদক্ষেপ নেবে, তাতে দল সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনবিরোধী সহিংস কর্মকাণ্ড প্রশ্রয় দেব না। আইনভঙ্গ করলে নির্বাচন কমিশন যে ব্যবস্থা নেবে, তাতে আমরা সমর্থন দেব।’
আজ রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। নির্বাচনকে ঘিরে কোনো সহিংসতা চাই না। একটা ভায়োলেন্সফ্রি, পিসফুল (সহিংসতামুক্ত, শান্তিপূর্ণ) নির্বাচন, শেখ হাসিনা আমাদের নেত্রী তিনি সেটা নিজেই বারবার বলছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিংবা কোনো প্রার্থী সহযোগী সহিংসতায় যদি জড়ান, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন যে আইনগত ব্যবস্থা নেবে আমরা সমর্থন করি। কোনো প্রকার নির্বাচনবিরোধী সহিংস কর্মকাণ্ড আমরা সমর্থন বা প্রশ্রয় দেব না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা হয়েছেন, এরা আমাদের দলের নেতাকর্মী, তাদেরকেও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবতে হবে এবং কোনো প্রকার পক্ষপাত আর কোনো প্রকার বৈরী মনোভব প্রদর্শন সমর্থনযোগ্য নয়। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘যারাই নির্বাচনবিরোধী কোনো প্রকার সহিংস তৎপরতা করবে, তারা যেই হোক, যারাই হোক; কারো ব্যাপারে পক্ষপাতের কোনো সুযোগ নেই। আইনভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা। নির্বাচন কমিশন যে ব্যবস্থা নেবে, আমরা আগেই বলেছি—তাদের যুক্তিযুক্ত যে কোনো ব্যবস্থা আমরা সমর্থন দেব।’
বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছেন, দেশের জনগণ তাদের বর্জন করা শুরু করেছে। খাজনা দেবে না, ট্যাক্স দেবে না, ইউটিলিটি বিল দেবে না, এই ধরনের উদ্ভট কথা হাস্যকর। দেশ কি আরেকবার স্বাধীন হচ্ছে? এটা কি বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ? কি দুঃসাহস! মাথা খারাপ হয়ে গেছে এদের।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘নির্বাচন করলেও ব্যর্থ, আন্দোলন করে ব্যর্থ, এখন তাদের সামনে আর কী আছে? তারা এই নির্বাচন বর্জন করার মধ্য দিয়ে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব আরও সংকুচিত হবে ভবিষ্যতে, অনিশ্চয়তা বাড়বে এবং নেগেটিভ রাজনীতির জন্য তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। এই রাজনীতি আর গণতন্ত্র বিপরীতমুখী।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিল না দিলে সব ধরনের লাইন কেটে যাবে, সোজা কথা। খাজনা ট্যাক্স না দিলে শাস্তি পেতে হবে। অসহযোগ বলবেন, ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন না করতে দলের লোকদের বলছেন। আপনাদের অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে আগেই। এদের অনেকের ব্যাংকে লেনদেন আছে। তারা তারেক রহমানের ডাক শুনতে গেলে তাদের নিজেদেরই সব যাবে। আমও যাবে, ছালাও যাবে। কাজেই তারেকের ডাকে তারা সাড়া দেবে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’
তারেক রহমানকে রাজপথে এসে আন্দোলনের পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিদেশে বসে রিমোট কন্ট্রোলে ডাক দিচ্ছেন, নিজে কেন উপস্থিত নেই? সাহস থাকলে নিজে আসেন। মোকাবিলা হবে রাজপথে। আন্দোলন করুন। রিজভীকে ছেড়ে দিয়েছেন। আজকে শুনলাম চান্দিনার অন্ধকারে কুয়াশার মধ্যে পেছনে ১০ থেকে ১২ জন মিছিল করছে। নিজস্ব উপায়ে ভিডিও করছে। করে টেলিভিশনে পাঠায়, ফেসবুকে প্রচার করে। এটা কি আন্দোলন? তারেক রহমান রিমোট কন্ট্রোলে বিদেশে বসে ডাক দিলে বাংলাদেশে খোমেনি স্টাইলে বিপ্লব হবে না। এটা সেই দেশ নয়। আন্দোলনে হয় রাজপথে, না হয় জেলে থাকতে হবে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সন্ত্রাস করে তাদের মুখে গণতন্ত্রের বুলি শোভা পায় না। সন্ত্রাস করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয় না। নির্বাচন হবে সারা দুনিয়ার গণতান্ত্রিক দেশের মতো, স্টান্ডার্ড অনুযায়ী ভোট হবে। ভোটার উপস্থিতি হবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যে উপস্থিতি, সে উপস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের হতাশ হতে হবে না। ভালো একটা উপস্থিতি হবে।’
এ সময় নিজের নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণকে নির্বাচনের উৎসবে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার নিজের নির্বাচনি এলাকা ঘুরে এসেছি। জোর করে কাউকে দিয়ে স্লোগান দেওয়ানো যায় না। নির্বাচনে স্লোগান অনেক কিছু। তাদের মধ্যে স্বতস্ফূর্ততা দেখেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীমসহ আরও অনেকে।