সীমান্ত দিয়ে আনতেন অস্ত্র, প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে দেখাতেন ভয়
রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ও যাত্রাবাড়ী থানার কাজীরগাঁও এলাকায় পৃথক অভিযানে দুই অস্ত্র বিক্রেতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদের মধ্যে একজন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর আজ শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এসব তথ্যের পাশাপাশি জানান, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে অস্ত্র আনা এসব অস্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করত। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ভয় দেখাতেও ব্যবহার করা হতো।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—আলমগীর হোসেন (৩৮), সৈয়দ মিলন (৪০) ও শেখ জিয়াউর রহমান জিয়া (৪২)।
ডিবি প্রধান বলেন, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রতিটি টিম নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি-তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনাল টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে দুই স্থানে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তারা লালমনিরহাটের সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে শেখ জিয়াউর রহমান জিয়ার মাধ্যমে অস্ত্র সরবরাহ করত। এই জিয়া মিডিয়া ম্যানসহ কাজ করছে।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, অস্ত্র ব্যবসায়ীরা মনিরহাটের সীমান্ত থেকে অস্ত্র এনে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে দিত। তারা এই সকল অস্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করত। নির্বাচনে প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে ভয় দেখানো ও সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হতো। এমনকি, তারা প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দিত। জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে, আর কতগুলো অস্ত্র এভাবে কার কার কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার অস্ত্রকারবারীদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মিলন এক সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করত। ছাত্রলীগ করলেও তার নামে ৯টা মামলা রয়েছে। একাধিকবার জেল খেটেছে। সুতরাং, আমাদের চোখে তিনি একজন সন্ত্রাসী।
হারুন বলেন, ছাত্রলীগ করলেও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারা কোন কোন প্রার্থীকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে সেটি আমরা তদন্তের মাধ্যমে আমার বের করব।
নির্বাচনে তাদের মাধ্যমে কতগুলো অস্ত্র এসেছে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, আলমগীর ও মিলন নামের দুই সন্ত্রাসী লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র আনতেন। এরপর জিয়ার কাছে বুঝিয়ে দিতেন। এই জিয়া বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অস্ত্র পরে বিক্রি করতেন।
থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে প্রস্তুতি ও নাশকতার হুমকি আছে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কী কী করা যাবে আর কী কী করা যাবে না। পাশাপাশি আমরা খোঁজ-খবর রাখছি, কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর পাশাপাশি আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য কাজ করছে।
একদিকে বছর শেষে নতুন বছর আসছে। অন্যদিকে, নির্বাচন সামনে সব কিছু মিলিয়ে আমরাদের পর্যাপ্ত ফোর্স মাঠে কাজ করছে।