ছয় মাস পর ১১ ভারতীয় গরু মুক্তি
বিকেল অনুমান ৪টা। মাইকে হাক-ডাক চলছে। ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে অসংখ্য মানুষের ভিড়। কসাই থেকে শরু করে নানা পেশার মানুষ। ৩০০ টাকার বিনিময়ে টোকেন নিচ্ছে তারা।
ভিড় দেখে টহল র্যাবের সদস্যরাও এসে হাজির। প্রশ্ন করতেই জানা গেল কিছু সময়ের মধ্যে ১১টি ভারতীয় গরু মুক্তি দেওয়া হবে। ১৯২ দিন (৬ মাস) নিরাপত্তা হেফাজত রাখা হয়েছিল গরুগুলো।
গতকাল মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে এই গরুগুলো প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করেন আদালত। সর্বোচ্চ নিলাম ডাকে কিনে নেন শৈলকুপা উপজেলার কাচের কোল গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন ও মীর্জাপুরের শওকত হোসেন।
গরুগুলোর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবু সায়েম জানান, ২০২৩ সালের ২১ জুন গভীর রাতে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নাটীমা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করার সময় ভারতীয় ওই গরুগুলো আটক করে জেলা ডিবি পুলিশ। সে সময় চোরাকারবারি মহেশপুর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের মো. ফারুক হোসেন, মো. সাদিসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
মো. আবু সায়েম আরও জানান, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহেশপুর থানায় ডিবির এসআই পারভেজ কবির বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে তিন চোরাকারবারিকে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু গরু নিয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশ। আদালতের কাছে নিলামের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। কিন্তু নিলাম না হওয়ায় গরুগুলোর মুক্তি মেলেনি।
মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন দুই ব্যক্তি। মামলা মাসের পর মাস চলতে থাকে। সদর থানা চত্বরে নিরীহ প্রাণীগুলোর চোখের জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনোজ কুমারকে গরুগুলোর দায়িত্ব দেন আদালত। পরে সদর থানা চত্বরে একটি অস্থায়ী শেড নির্মাণ করেন তিনি। সেখানেই রোদ-বৃষ্টির মধ্যে থেকে যায় গরুগুলো। দুজন রাখাল রেখে পরিচর্যা শুরু হয়।
ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল আদালতে মালিকানা দাবি করে করা মামলায় হেরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করে মালিকরা। সঠিক কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়ে জজ আদালতেও হেরে যায় তারা। মামলা চলে যায় উচ্চ আদালতে। হঠাৎ মামলা তুলে নেয় ওই দুই ব্যক্তি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আবু সায়েম আরও জানান, খাবার বাবদ এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে প্রাণিসম্পদ বিভাগ ১২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা খরচ করেছে। বাকি ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তাঁর।
এ বিষয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির জিয়াউর রহমান জানান, ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আল-আমিন মাতুব্বর হেফাজতে থাকা গরুগুলো নিলাম করার জন্য অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি নিলাম কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারুক আজম (সদস্য সচিব), মো. ওয়াজিদুর রহমান ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম নবী (সদস্য)।
চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আরও জানান ওই কমিটির পক্ষ থেকে আদালত চত্বরে প্রকাশ্যে নিলামে ১১টি গরু বিক্রি করা হয়। গরুগুলো বিক্রি হয়েছে ১৯ লাখ পাঁচ হাজার টাকায়। সরকারি মূল্য ধরা হয়েছিল প্রতিটি এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। ভ্যাট ও আইটিসহ ২১ লাখ ৪৩ হাজার ১২৫ টাকা। গরু পালন করতে যে টাকা খরচ হয়েছে তা যাচাই-বছাই করা হবে। এরপর খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।