তিনজনকে গুলি করে হত্যায় পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড
পরকীয়ার জেরে কুষ্টিয়ার বহুল আলোচিত স্ত্রী-সন্তান ও যুবককে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা মামলার একমাত্র আসামি বরখাস্ত হওয়া পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়কে (৩৪) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসাথে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমীন এ রায় দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী। এ সময় আসামি সৌমেন রায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। জামিনে থাকা অবস্থায় তিনি ভারত চলে গেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত সৌমেন রায় মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের আসবা গ্রামের সুনীল রায়ের ছেলে। তিনি সর্বশেষ খুলনার ফুলতলা থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ জুন বেলা ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় এলাকার নাজ ম্যানশন মার্কেটের বিকাশের দোকানের সামনে এএসআই সৌমেন রায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা খাতুন (২৫), দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রথম পক্ষের ছেলে রবিন (৫) ও দ্বিতীয় স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক শাকিল খানকে (৩০) সরকারি পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে আটকে রাখার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকেই সার্ভিস রিভলভার, গুলি ও ম্যাগাজিনসহ সৌমেনকে গ্রেপ্তার করে। ঐদিন বিকেলেই তাকে বরখাস্ত করা হয়। একইদিন রাতে এএসআই সৌমেন রায়কে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম। পরের দিন ১৪ জুন বিকেলে কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনামুল হকের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সৌমেন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশিকান্ত সরকার তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
২০২২ সালের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়ে পালিয়ে যান সৌমেন রায়। কুষ্টিয়া আদালতে বারবার আত্মসমর্পণের দিন ধার্য থাকলেও সৌমেন আত্মসমর্পণ করেননি। আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পলাতক সৌমেন।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী বলেন, ‘কুষ্টিয়া সদর থানার চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারে জড়িত অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য সৌমেন রায়ের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে তিনি উচ্চ আদালত থেকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনাদেশ প্রাপ্ত হয়ে কারামুক্ত হন। এরপর থেকে অদ্যাবধি আদালতে বিচারিক দিবসে হাজির না হয়ে পলাতক রয়েছেন সৌমেন রায়।
মামলার বাদী হাসিনা বেগম বলেন, আমার মেয়ে, তার ছেলে রবিন ও শাকিল নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা করেছে সৌমেন। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জেনেছি সে হাইকোর্ট থেকে জামিনে বেরিয়ে ভারতে পালিয়েছে। এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামিকে জামিন দেওয়ায় আমি হতাশ। আদালত সৌমেনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় আমি খুশি। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হোক।
উল্লেখ্য, কুমারখালী থানায় দায়িত্বে থাকার সময় এএসআই সৌমেনের সাথে একটি মামলাকে কেন্দ্র করে আসমার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সময় সৌমেন তার নাম মো. সুমন হোসেন রাখেন এবং সুমন নামেই মুসলিম বিধান মতে আসমাকে বিয়ে করেন। সৌমেন আসমার তৃতীয় স্বামী ছিলেন। বিয়ের পর থেকেই কুষ্টিয়ার আড়ুয়াপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় তারা বাস করছিলেন।
এএসআই সৌমেন খুলনার ফুলতলা থানায় বদলি হওয়ার পর থেকেই বিকাশকর্মী শাকিলের সাথে সম্পর্কে জড়ান আসমা। এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি সৌমেন। সেই ক্ষোভ থেকেই প্রকাশ্যে স্ত্রী আসমা, আসমার দ্বিতীয় স্বামীর ছেলে রবিন এবং পরকীয়া প্রেমিক শাকিলকে গুলি করে হত্যা করেন সৌমেন।
সৌমেন রায় ২০১৫ সালে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে উন্নীত হন। পরে ২০১৬ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগ দেন। সেখান থেকে মিরপুর থানার হালসা ক্যাম্প, বাগেরহাট থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত ছিলেন সৌমেন রায়।