নতুন মাত্রায় জুলুম চালাচ্ছে ডামি সরকার : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সম্পূর্ণ একদলীয়—একতরফা ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মসনদের অবৈধ মেয়াদ প্রলম্বিত করে আরও বেপরোয়া হয়ে জনগণের ওপর নতুন মাত্রায় জুলুম চালাচ্ছে ডামি সরকার। মানুষের বেঁচে—বর্তে থাকার অধিকার, জানমাল, মানবাধিকার, জননিরাপত্তা লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। তাদের অনঢ়তা, একগুঁয়েমি ও বৈরিতার আঘাতে গণতন্ত্র কবরে শায়িত।
আজ সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, রাষ্ট্রের পেশীশক্তি দিয়ে বিরোধী দল দমনের অভিনব সব পন্থা বিগত দেড় দশক ধরে অব্যাহত আছে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলা করতে গিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বাড়াবাড়ি বলপ্রয়োগ, একই সময় ক্ষমতাসীন দলের পাল্টা কর্মসূচি সংঘাতময় বিভীষিকার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
রুহুল কবির বলেন, দৃষ্টান্তহীন নতুন মডেলের একদলীয় বাকশাল ২.০ প্রতিষ্ঠার পর আওয়ামী লীগের নেতা—কর্মী—সমর্থক—উচ্ছিষ্টভোগী—দালাল ছাড়া দেশের সাধারণ মানুষ যেন উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। বিরোধীদল নিস্পেষণ—দলন—গ্রেপ্তার—হত্যা আর সাধারণ জনগণের রক্তচুষে খাওয়াই এখন মাফিয়া সরকারের ব্রত। জনজীবনকে তারা দুর্বিষহ করে তুলেছে।
রিজভী বলেন, মানুষের জীবনে নেমে এসেছে নাভিশ্বাস দশা। এদেশে স্বস্তিকর জীবন যাপন বলে কিছু নেই। একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের ভেতরে বাংলাদেশকে নিপতিত করা হয়েছে। মানুষ আর সইতে পারছে না। অসহায় মানুষের বুকফাটা কান্নার শব্দ এই লুটপাট টাকা পাচারে ব্যস্ত সরকার শুনতে পাচ্ছে না। গ্যাস নাই, চুলা ঠান্ডা, রাস্তায় যানজট, বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং, পুতি—দুর্গন্ধময় ওয়াসার ময়লা পানি, বাজারে আগুন। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সড়কে মৃত্যু, খুন, ডায়রিয়াসহ নিত্যপণ্যের দাম আওয়ামী সিন্ডিকেট লাগামহীন ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সভ্যতার জন্য বৈরী সংগঠন ছাত্রলীগ গড়ে তুলেছে নারীর শ্লীলতাহানিসহ সন্ত্রাস আর নৈরাজ্যের অভয়ারণ্য। সকল বিশ্ববিদ্যালয় এখন রক্তাক্ত এবং নারীদের জন্য বিপজ্জনক স্থান।
রিজভী বলেন, সরকারি দলের প্রশ্রয়ে শহর—নগর—বন্দর—জনপদে দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর গ্যাংয়ের ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, হামলা ও খুনাখুনিতে মানুষ আতঙ্কিত। দেশকে পরিণত করা হয়েছে পৃথিবীর এক নম্বর শব্দ আর বায়ুদূষণের ভাগাড়ে। সব মিলিয়ে কেবল এই রাজধানী ঢাকা নয়, পুরো দেশটাকেই যাতনাময়—বিষাদলোকে পরিণত করেছে ভোট ডাকাতির মাফিয়া সরকার। নিত্যপণ্যের বাজার লুটেরা মাফিয়া—সিন্ডিকেটের হাতে বর্গা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
রিজভী বলেন, ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে জনগণ। মাহে রমজানকে সামনে রেখে এখন থেকেই সরকারের সিন্ডিকেট চক্র জনগণের পকেট কাটতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব তো পড়েইনি, উল্টো গত ১০ দিনে রমজান সংশ্লিষ্ট কয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। শুল্ক কমানোর পরে ঐ চারটি পণ্যের দাম কেজিতে ৪০ টাকা কমার কথা, কিন্তু কমেনি তো বটেই বরং এই চারটি পণ্যের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে গেছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৪ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৩২ টাকায় বিক্রি হতো। এখন খুচরা বাজারে খোলা চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখনও সেই দরে কিনতে হচ্ছে চিনি।