ওবায়দুল কাদের স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছেন : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব ডিমেন্সিয়াতে নয়, তিনি অ্যামেন্সিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছেন। উনি সম্পূর্ণ ভুলে গেছেন—২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এর ভূমিকার কথা—যা ছিল একটি দেশের অভ্যন্তরে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। কারণ তাদেরকে প্রভু মানে বলেই ওবায়দুল কাদের সাহেবরা এই হস্তক্ষেপের সুযোগ দিয়েছিলেন এবং এখনও দিচ্ছেন। এই ঘটনা প্রমাণিত হয়—আওয়ামী লীগ প্রভুদের নিকট কতটুকু নতজানু।
‘জনগণ দ্বারা বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিএনপি নেতারা তাদের বিদেশি প্রভুদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে’আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে আজ রোববার (৩ মার্চ) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এটি দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়ার এক ভয়ানক দৃষ্টান্ত। এটি নিজ স্বার্থে দেশের অস্তিত্ব ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া। এবারও ডামি নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী প্রভুদের অসৎ তৎপরতায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে—তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের ভোটাধিকারকে থোড়াই কেয়ার করে। আওয়ামী লীগ তাদের প্রভুর দ্বারে দ্বারে নয়, বরং পদতলে বসে মোসাহেবী করেছেন, আর দেশের স্বাধীনতা—সার্বভৌমত্বকে অর্ঘ্য হিসেবে তুলে দিয়েছেন প্রভুর দরবারে।
রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন—‘বর্তমানে দেশে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে, বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপি নেতারা মিথ্যাচার করছে’। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার কি মনে আছে যে, শেখ হাসিনা কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন—‘প্রতিদিন একটু একটু করে লোডশেডিং দিতে বলেছি’। কেন বলেছিলেন, আসলে বিদ্যুতের কি দশা সেটি ডামি প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই প্রকাশ পায়। সেতুমন্ত্রীসহ ডামি সরকারের মন্ত্রীদের অনর্গল মিথ্যা বয়ান মূলত অচল, অবাস্তব, উপেক্ষণীয় এমনকি বর্জনীয় বটে। এ ধরনের বয়ান জনগণের প্রতি তাদের নির্দয় মনোবৃত্তিরই বহিঃপ্রকাশ। অগণতান্ত্রিক শক্তির দোসররা কখনোই সত্যের পূজারী হতে পারে না। অবৈধ ক্ষমতা, সম্পদ পাচার, আর্থিক খাতে হরিলুট, দুঃশাসনের পরিসর যারা প্রতিদিন প্রসারিত করছে মিথ্যার সাথে তাদেরই অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। যাদের একজন মন্ত্রীর বিদেশে দুই শো মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি থাকে তাহলে সেই সরকারের অন্য মন্ত্রীরা যে, চোখে রঙিন চশমা নিয়েই রাজত্ব করছেন তা বলাই বাহুল্য। ঢাকাসহ মফস্বলে ভয়াবহ লোডশেডিং, এর ওপর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে বাসা ভাড়ার চেয়েও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় অনেক বেশি। ওবায়দুল কাদের সাহেবরা ক্ষমতার স্বর্গে বাস করেন বলে বিদ্যুতের প্রকৃত চিত্র জানতে পারেন না। বিদ্যুতের নিচের দিকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি আর উপরের দিকে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি কি চরম বৃদ্ধি নয়? অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর এতে কোন কিছু যায়আসে না। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে মধ্যম আয় ও নিম্ন আয়ের মানুষরা যে দিশেহারা সে খবর ক্ষমতার মোহে অন্ধ ওবায়দুল কাদের সাহেবদের জানা নাও থাকতে পারে।
রিজভী বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বিএনপি নাকি ইসরায়েলের দোসর এবং গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বরাবরই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাবার্তা আদিযুগের গল্পের মতো। ওবায়দুল কাদের সাহেব টাটকা মিথ্যা কথা বলেন আর হাছান মাহমুদ সাহেব বাসী মিথ্যা কথা বলেন। সারা দেশের মানুষ জানে, গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের বিরোধী দল নিধনের জন্য ইসরায়েল থেকে স্পাইওয়্যার কেনা হয়েছে—যা দিয়ে মোবাইলফোনে আড়িপাতা সম্ভব। আওয়ামী লীগের ক্ষমতালাভের আগে পরে এরা কখনোই ন্যায়নীতির নির্দেশ গ্রাহ্য করেনি। এরা মুখে যা বলে, করে তার বিপরীত। হঠাৎ হাছান মাহমুদ সাহেব এ ধরনের কথা বলা শুরু করলেন কেন ? মনে হচ্ছে ডামি সরকার নিজের ছায়া দেখে ভয় পাচ্ছে এবং তলে তলে বিপদ আঁচ করতে পারছে। এদের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা যাচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা—কল্পনা এড়াতেই ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদ সাহেবরা অকথ্য, অসত্য হাইপার—প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন।