দুজনকে কুপিয়ে ‘গলাকাটা রাব্বি’ গ্যাং গ্রুপের উদযাপন, গ্রেপ্তার ৫
একই গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন। কিন্তু, মাদক কেনা-বেচাসহ নানা দ্বন্দ্বের জেরে পৃথক গ্যাং তৈরি করেন তারা। এরপর থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হতো। চলমান এই বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের দুজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পার্টি করে উদযাপন করেন একটি গ্রুপের সদস্যরা। পার্টি শেষে যখন শুনতে পান আহতদের মধ্যে ফয়সাল নামে একজন মারা গেছেন, তখনই দেশের বিভিন্নস্থানে আত্মগোপনে চলে যান অন্যরা।
রাজধানীর পল্লবীতে ‘পেপার সানী’ ও ‘গালকাটা রাব্বি’ নামের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্যাং লিডারসহ পাঁচজনকে গতকাল শুক্রবার রাতে নরসিংদী ও গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মো. আকাশ ওরফে টান আকাশ (২২), ফজলে রাব্বি ওরফে হিটার রাব্বি ওরফে গালকাটা রাব্বি (২০), মো. ইমরান (২৫), মো. রাসেল কাজী (২৪) ও নয়ন (২৫)।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার রাব্বি ও আকাশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন একটি বাগান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার বিবরণে খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় পল্লবী এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত প্রকাশ্যে কুপিয়ে ফয়সাল নামে এক যুবককে হত্যা করে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে র্যাব। এর প্রেক্ষিতে র্যাব-৪ ও ১১ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুর এবং নরসিংদী থেকে মূল আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা এবং ভিকটিম একসময় মিরপুর এলাকার কিশোর গ্যাং ‘পেপার সানী’ গ্রুপের সদস্য ছিলেন। গালকাটা রাব্বি পেপার সানী গ্রুপের হিটম্যান হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু, ৪-৫ মাস আগে মাদক কেনা-বেচা নিয়ে ভাগাভাগি, সিনিয়র-জুনিয়র, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের কোন্দল ঘিরে রাব্বি ওই গ্রুপ থেকে বের হয়ে ‘গালকাটা রাব্বি’ নামে পৃথক গ্রুপ তৈরি করেনি।
খন্দকার আল মঈন জানান, এরপর থেকেই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হতো। ঘটনার প্রায় ১ মাস আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বিকে মারধর করে পায়ের রগ কেটে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলায় তারা রাব্বিকে উদ্ধার করে। গত ১৫ মার্চ দুই গ্রুপের মধ্যে আবার মারামারি হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এতে রাব্বি গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ ছাড়া, ঘটনার দিন পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা রাব্বি গ্রুপের একজন সদস্যের বোনকে ইভটিজিং করলে রাব্বি আরও ক্ষিপ্ত হয়।
এর মধ্যে রাব্বি গ্রুপের সদস্যরা জানতে পারে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা একটি ইফতার পার্টিতে গেছে। ভিকটিম ফয়সাল ও রানা স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার পার্টি শেষে ফেরার পথে পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্রসহ তাদের ওপর হামলা করে রাব্বী গ্রুপের সদস্যরা। এ সময় ফয়সাল ও রানাকে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয় বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
খন্দকার আল মঈন জানান, পরে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্রুপের এক সদস্যের বাসার ছাদে গিয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যকে উচিত শিক্ষা দিতে পারায় পার্টি করে উদযাপন করেন। পার্টি শেষে তারা জানতে পারেন ফয়সাল হাসপাতালে মারা গেছে ও রানা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
র্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা প্রথমে নেত্রকোনায় আত্মগোপন করে দুই দিন অবস্থান করেন। পরে মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার রাব্বির বিরুদ্ধে ডাকাতি, মারামারি ও মাদক সংক্রান্তে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা রয়েছে এবং ইতোপূর্বে একাধিকবার কারাভোগ করেছেন। আকাশের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে, তিনিও একাধিকবার কারাভোগ করেছেন।
এ ছাড়া, গ্রেপ্তার রাসেল, ইমরান ও নয়ন কিশোর গ্যাং ‘গালকাটা রাব্বি’ গ্রুপের সদস্য। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মারামারি ও মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাব্বীর গ্রুপে ১৪-১৫ জন সদস্য রয়েছে। যাদের অধিকাংশই আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্য ছিল। পরে তারা সেই গ্রুপ থেকে বের হয়ে নতুন গ্রুপে যোগ দেয়। এখন পর্যন্ত তাদের ইন্ধনদাতা বা মদতদাতার তথ্য পাওয়া যায়নি। পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।