সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে এলেও জ্বলে উঠতে পারে : পরিবেশ মন্ত্রণালয়
প্রায় ২৪ ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে সুন্দরবনের আগুন। যদিও নির্বাপণ হয়নি। বনবিভাগের পক্ষ থেকে এমনটি দাবি করা হয়েছে। আগুন যাতে নতুন করে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য রাতেও পানি স্প্রে করা হচ্ছে। আর বিমান বাহিনী বলছে, আগামী তিন দিনের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ সম্ভব। যদিও সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফরেস্ট ফায়ার আপাতত নিভে গেছে বা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে মনে হলেও আবার যেকোনো সময় নতুনভাবে সৃষ্টি ও বিস্তৃতি লাভ করতে পারে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী নুরুল করিম বলেন, আজ সকাল থেকে সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নেভাতে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও বনরক্ষীরা কাজ শুরু করেছেন। নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপক সদস্যদের পাশাপাশি বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর থেকে পানি ছিটিয়েও আগুন নেভানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
ডিএফওর দাবি আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন লাগার পুরো ঘটনাস্থল ঘিরে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। আগুন যাতে বিস্তৃত হতে না পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেওয়া নৌবাহিনীর মোংলার দিগরাজ নৌঘাঁটির ইঞ্জিনিয়ার অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আরাফাতুল আরেফিন বলেন, আগুন কীভাবে লেগেছে তার কারণ অনুসন্ধানের চেয়ে আগুন নেভানো জরুরি। তাই আজ সকাল থেকেই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এখন আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা দীপংকর বরের পাঠানো ‘সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি’তে বলা হয়েছে, ‘আগুন লাগার স্থানের চারদিকে প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে ফায়ার লাইন কেটে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। তবে, যেহেতু আগুন মাটির নিচ দিয়ে গাছের শিকড়ের মধ্যে দিয়ে বিস্তৃতি লাভ করছে, কাজেই সতর্কতার সঙ্গে আগুন নিভাতে হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আগামী কয়েক দিন এখানে অগ্নি নির্বাপণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চলমান রাখা হবে। কেননা ফরেস্ট ফায়ার আপাতত নিভে গেছে বা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে মনে হলেও আবার যেকোনো সময় এটি নতুনভাবে সৃষ্টি ও বিস্তৃতি লাভ করতে পারে।
এর আগে সকাল ৯টা থেকে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়ার ছিলা এলাকায় লাগা আগুন নেভাতে কাজ শুরু হয়। শুরুতেই নৌবাহিনীর মোংলা ঘাঁটির ১০ সদস্যের একটি অগ্নি নির্বাপক দল আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়ে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পাশের ভোলা নদী থেকে পানি উঠানোর জন্য পাইপ সংযোগ দিয়ে চারদিকে ফায়ার লাইন কাটেন। সেই আগুন নেভানোর কাজ এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাটের উপপরিচালক মামুন আহমেদ জানান, আজ সকালেই সুন্দরবনের আগুন নেভাতে তাদের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসেছে। এর মধ্যে মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরনখোলার তিনটি ইউনিট কাজ শুরু করেছে। বাকি দুটি ইউনিট স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের ডিএফও বলেন, গতকাল নানা প্রতিকূলতায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা যায়নি। তবে, আজ সকাল থেকে এ কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার যোগ দিয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীও সব রকমের সহযোগিতা করছে।
এক প্রশ্নে ডিএফও বলেন, কী কারণে, কীভাবে আগুন লেগেছে তার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। স্থানীয়রা একেকজন একেক তথ্য দিচ্ছে। সব তথ্যই আমলে নিয়ে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে প্রধান বনসংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী আজ বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, বনের চার-পাঁচ একর এলাকার গুল্মজাতীয় লতাপাতায় এ আগুন লাগে। এখন উপরে কোনো আগুন নেই। তারপরও নিচের আগুন যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য আজ সন্ধ্যায় ২০ সদস্যদের দুটি দল করে দেওয়া হয়েছে। একটি রাত ৯টা থেকে ১২টা আর অপরটি ১২টার পর থেকে পাম্প দিয়ে পানি স্প্রে করবে। যাতে নতুন করে আগুনের বিস্তার না ঘটে। তিনি আরও বলেন, আগামী তিন দিন আগুন পর্যবেক্ষণে রেখে নির্বাপণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে।