আমাকে ৩২ নম্বরে ঢুকতে দেয়নি জিয়াউর রহমান : শেখ হাসিনা
পরিবারের সব সদস্যকে হত্যার পর ৪৪ বছর আগে এই দিনে (১৭ মে) দেশে ফিরে আসার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘৩২ নম্বরে আমরা মিলাদ পড়তে চাইলাম, আমাকে ঢুকতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। উল্টো বলেছিল বাড়ি দেবে, গাড়ি দেবে, সব দেবে। বলেছিলাম তার কাছ থেকে কিছু নেব না। খুনির কাছ থেকে আমি কিছু নিতে পারি না।’
আজ শুক্রবার (১৭ মে) গণভবনে ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতারা শুভেচ্ছা জানাতে গেলে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া দিল্লি এবং লন্ডনে গিয়ে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন দিল্লিতে ছিলাম সেখানে গিয়ে জিয়াউর রহমান আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল, তার স্ত্রীও দেখা করতে চেয়েছিল, আমি দেখা করিনি। লন্ডনে যখন তখনও দেখা করতে চেয়েছিল, আমরা দেখা করিনি। আমি যখন এলাম ৩২ নম্বরে ঢুকতে দেবে না, উল্টো বাড়ি-গাড়ি সাধবে, সেটা তো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না।’
দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেদিন (১৯৮১ সালের ১৭ মে) ফিরে এসেছিলাম। এত বড় দল পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা ছিল না। ছাত্রলীগ করার সময় নেতা হওয়ার চেষ্টা করিনি। দলের প্রয়োজনে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটাই পালন করেছি। কিন্তু যখন এই দায়িত্ব পেলাম, এটা বড় দায়িত্ব।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘কী পেলাম, না পেলাম সেই চিন্তা করিনি। ভবিষ্যৎ কী? সেই চিন্তাও করি না। চিন্তা করি, দেশের মানুষের ভবিষ্যতটা আরও সুন্দরভাবে গড়ে দিয়ে যাব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে শক্তিশালী ও বড় সংগঠন। জনগণের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দল।’ তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিবার চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে বেরিয়ে আসেন এবং আগামীতেও ষড়যন্ত্র হবে। তাই তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেন। সবাইকে সচেতন থাকার তাগিদ দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে রাখবেন, একটা দল করি শুধু নেতা হওয়ার জন্য না, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কী দিয়ে গেলাম–এটাই রাজনীতিকের জীবনের বড় কথা। এই কথাটা মাথায় রাখতে পারলে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে।’
আর যেন যুদ্ধাপরাধী-খুনিরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন, তারাই অপরাধী হয়ে গেল, যারা বিরোধিতা করেছিল, গণহত্যা করেছিল তারাই ক্ষমতায়; ওই অবস্থায় দেশে ফিরেছিলাম। আমার তো কিছুই ছিল না। একটা বিশ্বাস ছিল দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীর ওপর। এরপর লড়াই-সংগ্রাম করে এইটুকু বলতে পারি, পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, কারফিউ, প্রতি রাতে মার্শাল ল, দেশের মানুষের কোনো আশা নেই, শুধু হতাশা। এই হতাশ জাতিকে টেনে তোলা যায় না। তাদের মাঝে আশার আলো জাগাতে হয়, ভবিষ্যৎ দেখাতে হয়, উন্নত জীবনের চিত্র তুলে ধরতে হয়। তবেই মানুষকে নিয়ে কাজ করা যায়। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি।’