খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে ফিরছে বিএনপি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো বড় সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে৷ শনিবারের এই কর্মসূচির মূল দাবি, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি৷ এরপর, সরকার বিরোধী ধারাবাহিক কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে দলটি৷
বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়াও আরও দুটি ইস্যুকে সামনে রেখে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চান৷ ভারতের সঙ্গে রেল ট্রানজিট এবং দুর্নীতি-এই দুটি ইস্যুকে তারা সামনে আনতে চান৷ এ নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গেও কথা বলছেন দলের নেতারা৷
বিএনপির এক নেতা জানান, ‘‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি দলের যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন৷ ওই বৈঠকেই দলের সামনের দিনের বেশ কিছু আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়েছে৷”
বিএনপির কর্মসূচির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷ তারা পরিস্থিতি বুঝে আগের মতো পাল্টা কর্মসূচি দিতে পারে৷
শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে সমাবেশের পর ১ জুলাই দেশের সব মহানগরে এবং ৩ জুলাই জেলা পর্যায়ে সমাবেশের কর্মসূচিও দিয়েছে বিএনপি৷ গতকাল বুধবার যৌথ সভা শেষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, যেকোনো সময় তাঁর জীবনহানি হতে পারে৷ কিন্তু আদালতের দোহাই দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না৷ সে কারণে এখন রাজপথে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে৷”
গত শুক্রবার থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷ তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়েছে৷
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া৷ দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি৷ তার পরিবারের করা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়৷ তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার৷ খালেদা জিয়া এখন আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন৷
বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশররফ হোসেন বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিয়ে সরকার তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে বাধা দিচ্ছে৷ এর মাধ্যমে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে৷ খালেদা জিয়াই হলেন এই সরকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী৷ ফলে তাকে এইভাবে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে৷ দল তাই তার মুক্তির জন্য সর্বাত্মক আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এর সঙ্গে অন্য আরো ইস্যু নিয়ে আন্দোলন জেরদার করা হবে৷”
শনিবারের সমাবেশের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এরমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে৷ তারা সহসাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবশেষ ভারত সফর নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করবে বলেও জানা গেছে৷ সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়াও আরও কয়েকটি ইস্যুতে বিএনপি কর্মসূটি দিতে পারে বলে আভাস মিলেছে৷
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, ‘‘সামনে যে ইস্যু আসবে আমরা সেই ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তুলব৷ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমরা যুগ্ম মহাসচিবেরা বৈঠক করেছি৷ সেখানে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি৷ বিভিন্ন ইস্যু যেমন দুর্নীতি, ভারতের সঙ্গে চুক্তি এসব ব্যাপারে আমরা আন্দোলনের প্রস্তাব তুলে ধরেছি৷”
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আরও বলেন, ‘‘কয়েকদিনের মধ্যে একটি সংবাদ সম্মেলনে আমরা ভারতের সঙ্গে রেল ট্রানজিট এবং অন্যান্য সমঝোতা স্মারক নিয়ে কথা বলবো৷ এটা নিয়ে দেশে এবং বিদেশে আমাদের কাজ হচ্ছে৷ একই সঙ্গে সীমাহীন দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও আমরা কথা বলবো৷ এইসব ইস্যুতে আমরা অলআউট কর্মসূচি দেব৷”
জানা গেছে, ওই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরবে বিএনপি৷ ওইসব কর্মসূচিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সম্পৃক্ত করার কাজ চলছে৷ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরা নতুন করে এই সরকারের পতন আন্দোলনে একমত হয়েছে৷”
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেল ট্রানজিট এবং দুর্নীতি ইস্যু নিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়া নিয়ে কথা বলছি৷ বিএনপি একটি সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত জানাবে৷ এরপরই হয়তো যুগপৎ কর্মসূচি আসবে৷”
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি তারা দেবে কি-না তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন৷ যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে পাল্টা কর্মসূচি দেবে৷
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘আমরা কাউন্টার নয়, প্রয়োজনে উন্নয়ন সমাবেশ দেব৷ তবে সেটা দল সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতেই পারে৷ এটা তাদের অধিকার৷ তবে অশান্তি করলে সেটা তো পুলিশ প্রশাসন দেখবে৷”
এক প্রশ্নের জবাবে এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘বিএনপি একটি দুর্নীতিবাজ দল৷ তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা মানায়না৷ আমাদের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে৷ আর শেখ হাসিনার সরকারই ভারতের কাছ থেকে যা কিছু আদায় করেছে৷ বিএনপি পারেনি৷ তারা ক্ষমতায় থাকতে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার কথা বলেছিল৷ আর খালেদা জিয়ার মুক্তি বিএনপিই চায় না৷ তারা এটা নিয়ে রাজনীতি করছে৷”