‘অন্তর্বর্তী সরকার যেন কোনো স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে না পড়ে’
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় দুর্বৃত্ত মাফিয়া রাজনীতিকে আর ফিরতে দেওয়া যাবে না। গণঅভ্যুত্থানের পর অধিকার ও মুক্তির অর্জনের কাজ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকার যেন কোন কোটারি স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থ বা বিতর্কিত হবার অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দুই শহীদ বদিউজ্জামান ও আবদুল লতিফ স্মরণে ‘রক্তেভেজা গণঅভ্যুত্থান-গণআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।
জাতীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্র-শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানকে এবার আর ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। অধিকার ও মুক্তি অর্জনে পরিবর্তনের আকাঙ্খা থেকে আন্দোলনকারীদের কারও সরে আসার কোন অবকাশ নেই; গণঅভ্যুত্থানের বার্তা হচ্ছে দুর্বৃত্ত মাফিয়া দখলদারিত্বের রাজনীতিকে চিরতরে বিদায় দিতে হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার কাজ সম্পর্কে অস্পষ্টতার পাশাপাশি সমন্বয়হীনতাও দেখা যাচ্ছে, আত্মবিশ্বাসেরও ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে আবার বিশেষ কোন স্বার্থান্বেষীদের কাছে কোনভাবে জিম্মি না হয়ে পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনে যে অস্থিরতা চলছে অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে।
দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগের পাশাপাশি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নানা উসকানি, অনৈতিক চাপ ও প্রভাব মোকাবিলা করে তার নিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত হলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থান একদিনে সংগঠিত হয়নি; এর পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক দলসমূহ ও জনগণের বহুবছরের মরণপণ লড়াই-সংগ্রাম। এবারকার ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম ষোলবছর ও ছত্রিশ দিনের। হঠাৎ কোন ঘটনা সংগঠিত হয়নি। আমরা বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু সরকারকে তাদের ক্ষমতা ও এখতিয়ার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আমরা আশা করি রাজনৈতিক দল ও জনগণ আস্থায় নিয়ে সরকার সফল হবে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক সোহরাব হাসান বলেন, অতীতে কয়েকবার স্বৈরতন্ত্রের পতন হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র আসেনি, জনগণের মুক্তি হয়নি। এবার সবাইকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভদ্রোচিত অনেকগুলো কমিশন হয়েছে, কিন্তু শ্রমজীবী মেহনতিদের অধিকার নিয়ে কোন কমিশন হয়নি।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে দুর্বৃত্ত মাফিয়া রাজনীতিতে ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তারা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে দেশবাসীকে পাহারায় থাকার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম, নাগরিক ঐক্যর সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার, সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি আবদুন নূর, ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ প্রমুখ।
সভায় শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী। সভা পরিচালনা করেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান ও আবু হাসান টিপু।
সাধারণ সভার শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দুই শহীদ বদিউজ্জামান ও আবদুল লতিফসহ হাজারো শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।