আদালত অবমাননার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ডা. ফারুক কারাগারে
গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহম্মেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আদালত অবমাননার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ফারুক আহম্মেদকে আজ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে তোলা হয় আদালতে। সেখানে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান আদালত।
আদালতের নির্দেশে গতকাল শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টার থেকে ডা. ফারুককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলম জানান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হরিদাসপুর ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে পৈত্রিক ভিটার জমির দ্বন্দ্বের জেরে একই গ্রামের প্রতিপক্ষের দুলাল মোল্লাসহ একদল লোক রাম দা, ছুরি, লাঠিশোঠাসহ মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী জহুর মোল্লাকে মাদরাসায় যাওয়ার পথ রোধ করে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মক আহত করে। তার আর্তচিৎকারে মা বিনু বেগম (৫০), ভাই আজিজুল মোল্লা(২৭) এগিয়ে এলে তাদেরকেও বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাদেরকে প্রথমে গোপালগঞ্জ আড়াইশত শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হলে মাদরাসার শিক্ষার্থী জহুর ও তার ভাই আজিজুলকে ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘ ১৮ দিন চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় দুলাল মোল্লা, রওশন মোল্লা, সামিউল মোল্লা, রব্বিল মোল্লা, রিজান মোল্লাসহ একদল লোককে আসামি করে ২৯ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ সদর থানায় আহত জহুর ও আজিজুলের চাচা মো. নুর আমিন মোল্লা বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর গোপালগঞ্জ হাসপাতাল থেকে আহত জহুর ও আজিজুল আহত হওয়ার ঘটনায় চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ৩২৩ ধারায় সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
আহত ও বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলম আরও জানান, আসামিদের প্ররোচণায় লাভবান হওয়ার স্বার্থে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফারুক আহম্মেদ ভোতা অস্ত্রের আঘাত দেখিয়ে ৩২৬ ধারার পরিবর্তে ৩২৩ ধারার সার্টিফিকেট প্রদান করেন। ন্যায় সঙ্গত ও সঠিক সার্টিফিকেট প্রদান না করায় ১২ ডিসেম্বর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফিরোজ মামুনের আদালতে হাসপাতালে ভর্তি রেজিস্টার তলব, পুনরায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ন্যায় সংগত সার্টিফিকেট পাওয়ার বিষয়ে একটি আবেদন করা হয়। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত চিকিৎসক ফারুক আহম্মেদকে ১৭ ডিসেম্বর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ভর্তির রেজিস্টারসহ (জিআর ৩৮৪/২৪) আদালত তাকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। কিন্তু তিনি আদালতে উপস্থিত হননি। পরে আবারও ১৯ ডিসেম্বর হাজিরের নির্দেশ দেন। কিন্তু ১৯ ডিসেম্বর আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক মো. ফিরোজ মামুন ওই চিকিৎসককে পাঁচ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পরে শুক্রবার রাতে সদর থানা পুলিশ হাসপাতাল কোয়ার্টার থেকে ফারুককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়। বিকেলে তার জামিন আবেদন করা হলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবির হোসেন জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন।