প্যারোলে মুক্তি না মেলায় বাবার মরদেহ কারাগারে!
বাবার জানাজায় অংশ নিতে প্যারোলে জামিন আবেদন না মঞ্জুর হওয়ায় বাবার মরদেহ নেওয়া হয় কারাগারে। মরদেহ কারাগারে নেওয়ার ঘটনা নজীরবিহীন উল্লেখ করে হতবাক অনেকেই। আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা কারাগারে এই ঘটনা ঘটে।
জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়নের টানা দুই মেয়াদের বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রুবেলের বাবা গতকাল মারা যান। কোন সাংগঠনিক পদে না থাকলেও রুবেল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শহীদুল আলম শহীদ জানান, মানবিক কারণে জামিনে বা প্যারোলে মুক্তি পাওয়াটা একজন বিচারাধীন আসামির নৈতিক অধিকার। আমার দীর্ঘ ৪০ বছরের আইন পেশার অভিজ্ঞতায় কারাগারে মরদেহ পাঠানোর কথা কখনও শুনিনি। এটা আইন সম্মত নয়। বর্তমানে দেশে আইনের অপব্যবহার বা যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ও স্বজনদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রুবেল পাকুন্দিয়া থানায় বিভিন্ন অভিযোগে করা তিনটি মামলায় গত ৩ নভেম্বর থেকে কারাগারে আটক আছেন। তাঁর বাবা জিয়া উদ্দিন গতকাল ২৯ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
আজ সোমবার বিকেলে রুবেলের গ্রামের বাড়ি পাকুন্দিয়ার পুটিয়াতে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য রুবেলের পক্ষে গতকালই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বরাবরে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী সুজিত কুমার দে। জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমতকে নির্দেশ দেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্যারোলে মুক্তির আবেদন না মঞ্জুর করে বাবার মরদেহ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারের গেটে নাজমুল হুদা রুবেলকে অ্যাম্বুলেন্সে বাবার মরদেহ দেখানো হয়।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা থাকায় প্যারোলে মুক্তি না দিয়ে জেল গেটে মরদেহ দেখানোর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রয়োজনে ডাণ্ডাবেরি পরিয়ে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে জানাজায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব। কারাগারে মরদেহ পাঠানোর ঘটনা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী ও অমানবিক। আমার সম্পূর্ণ চাকরি জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি।
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের সুপার রীতেশ চাকমা বলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে পাঠানো পত্র মোতাবেক আমরা কারাগারের গেটে মরদেহ দেখানোর সুযোগ করে দেই। এ ধরনের অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম।
স্বজনরা জানান, আজ দুপুর ১২টার দিকে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। মরদেহের সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান রুবেলের মা নূরজাহান বেগম ও অন্য স্বজনরাও সেখানে যান। তবে সব স্বজনকে রুবেলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সটি কারাগারের ভেতরে নিয়ে যায় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানেই বাবার মরদেহ শেষবারের মতো দেখেন রুবেল। এরপর মা নূরজাহান বেগমকে ছেলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় কয়েক মিনিটের জন্য।
মা নূরজাহান বেগম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও কিছুক্ষণের জন্য ছেলের মুক্তির ব্যবস্থা করা যায়নি। তাই জেলেই মরদেহ নিয়ে এসেছি ছেলেকে একনজর দেখানোর জন্য।