স্বৈরাচারী শাসন আর ছাত্র আন্দোলনে অস্তিত্ব সংকটে আওয়ামী লীগ
একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে টানা ১৫ বছর স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ। যদিও টানা চতুর্থবারের একতরফা বিজয়ের আনন্দ ৬ মাস যেতে না যেতেই বিষাদে রূপ নেয়। ক্ষমতা হারিয়ে ঘরে-বাইরে নানা চাপে পড়ে দলটি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দলের নেতাকর্মীদের রেখে পালিয়ে যান দলপ্রধান শেখ হাসিনা। এতে স্বাধীনতার পর ৫৩ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার বড় ধরনের সংকটে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ। এরপর শেখ হাসিনার পথ ধরে বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীই দেশ ছাড়েন। দেশের মাটিতে আড়াই মাস আত্মগোপনে থেকে পালিয়ে যান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। এতে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে দেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দলটি।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অজুহাত দেখিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। দলীয় সরকারের অধীনে এ নির্বাচন হওয়ায় দেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয় এ বছরের ৭ জানুয়ারি। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পায়। জাতীয় পার্টি ও বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুললেও শেষ পর্যন্ত তারা সংসদে যায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবীবুল আউয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে এবং তার মতে সহিংসতার যে শঙ্কা ছিল, শেষ পর্যন্ত তেমনটি হয়নি। ৯ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা হয়।
শপথ গ্রহণ ও প্রথম সংসদ অধিবেশন
গেজেট প্রকাশের পর ১০ জানুয়ারি বিজয়ী সংসদ সদস্যরা বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেন। ১৫ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের আহ্বান করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ৩০ জানুয়ারি থেকে অধিবেশন শুরু হওয়া সংসদের মোট কার্যদিবস ছিল ২২টি। এ অধিবেশনে দুটি বিল পাস করে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের শেষ বাজেট
২০২৪ সালের ২০ মে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাজেট অধিবেশনের আহ্বান করেন। রাষ্ট্রপতির আহ্বানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হয় ৫ জুন। ৬ জুন ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শীর্ষক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি ছিল দেশের ৫৩তম, আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও শেষ বাজেট। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ছিল প্রথম বাজেট।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই জাতীয় সংসদে ৩০ জুন পাস সংসদে পাস হয় এ বাজেট। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়।
চীন ও ভারত সফর
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২০২৪ সালের ২১ জুন দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফর করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সফর শেষ করে ৯ জুলাই চারদিনের সফরে যান চীনে। চীনে চার দিনের সফর থাকলেও তা সংক্ষেপ করে চার দিনে চলে আসেন শেখ হাসিনা। তখন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অসুস্থতার কারণেই তিনি এ সফর সংক্ষেপ করেছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে চীন সফরে ২১টি ডকুমেন্টস ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করার কথা থাকলেও তখন এ সফর নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।
চীন ও ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন
ভারত সফর নিয়ে কোন সংবাদ সম্মেলন না করলেও চীন সফর শেষে ১০ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে আসেন শেখ হাসিনা। ১৪ জুলাই তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বিকেল ৪টায় এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে চীন-ভারত সফর নিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভারতে গেলে বলে দেশ বিক্রি করে দিয়েছি, চীনে গেলে বলে কিছুই দেয়নি। দুর্নীতির কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার বাসার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক, হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না।’
এ সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে দেশের রাজনৈতিক সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা চাকরি পাবে না তো চাকরি পাবে রাজাকারের সন্তানেরা।’ এই বাক্যটিই যেন আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়। তার সমালোচকরা তো বটেই এমনকি দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাও বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। তারা বলাবলি শুরু করেন, ‘পতনের কফিনে শেষ পেরেকটা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নিজেই মারলেন।’
শেখ হাসিনার এ কথার রেশ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকাসহ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। আন্দোলনের আগুনে যেন ঘি ঢেলে দেয় এই উক্তি। ওইদিন রাত থেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ছাত্ররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে ওঠে, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ স্লোগানে। এরপর থেকে ছাত্রদের কোটা আন্দোলনে যোগ দেয় সাধারণ জনগণ। কোটা আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে।
জুলাইয়ের আন্দোলন ঠেকাও কর্মসূচি
ছাত্র-জনতার এক দফা আন্দোলন ঠেকাতে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সাথে মাঠে নামানো হয় সেনাবাহিনীকেও। লেলিয়ে দেওয়া হয় নিজ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার। মারা যায় আন্দোলনরত ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী। ১৬ জুলাই রংপুরে মারা যায় আবু সাঈদসহ ৬ জন। এর পরেই বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যা। আন্দোলন চলে যায় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
জাতির উদ্দেশে সবশেষ ভাষণ
ছাত্র আন্দোলন যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পরে তখন ১৭ জুলাই শেখ হাসিনার দপ্তর থেকে জানানো হয় তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। সন্ধ্যা ৭টায় প্রায় আট মিনিটের সেই ভাষণটি বিটিভিসহ দেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।
ভাষণে শেখ হাসিনা কোটা আন্দোলনে যারা মারা গেছে তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দেন। আর সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করারও আহ্বান জানান। তবে ছাত্ররা তার কথায় আস্বস্ত হতে পারেনি। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন
ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে, পতনের দ্বারপ্রান্তে যখন শেখ হাসিনার সরকার; ঠিক সে সময় ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আওয়ামী লীগ সরকার।
তবে মাত্র ২৮ দিনের মাথায় ২৮ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ প্রজ্ঞাপন জারি করে এটা বাতিল করে।
আওয়ামী লীগের শেষ কথা
রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকে দমনের চেষ্টা করে হাসিনা সরকার। না পেরে প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সবশেষ ৩ আগস্ট ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন ওবায়দুল কাদের। ছাত্রদের সাথে আলোচনা আর দলীয় কর্মসূচির কথা বলে গা ঢাকা দেন তিনি। তার পর থেকে আজও তাকে দেখা যায়নি। তবে ৩ তারিখের যে কর্মসূচি কাদের দিয়েছিলেন পরে তা স্থগিত করা হয়।
এরপর হুমকি দিয়ে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ছাত্রদের সকল দাবি পূরণ করা হয়েছে। সরকার পতনের এক দফার এ আন্দোলন ছাত্রসমাজের না। তবে এ দাবি বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা লিপ্সুদের। তাই আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে পাড়ামহল্লায় নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সুতরাং উদ্ভুত পরিস্থিতি ও সকল হত্যার দায় আন্দোলনকারীদেরই নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। দেশ মাতৃকাকে ভালোবেসে আমরা ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি।
তবে তার এ ঘোষণার পরের দিন সকালেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে আর কাউকে দেখা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন ঘোষণা বা বার্তা দেওয়া হয়। তা কে বা কারা চালায় তা এখনও জানা যায়নি।
এক দফার মুখে শেখ হাসিনা
৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে।’ পরে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নাহিদ। তিনি বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলন চলবে। সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এ সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। আপনারা সরকারকে সমর্থন না দিয়ে জনগণকে সমর্থন দিন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচি ঠেকাতে ৪ আগস্ট তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। বলা হয়, সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সেই সঙ্গে অনির্দিষ্টকালের কারফিউও বহাল রাখা হয়।
ওই দিনের অসহযোগ আন্দোলনে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় ঢাকাসহ সারা দেশে ৮৩ জন নিহত হন। সরকার ঘোষিত ওই কারফিউ মানতে দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানায় সেনাবাহিনী।
পরের দিন ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। তারা সারা দেশে বিক্ষোভ-আন্দোলন এবং গণঅবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন। কঠোর হস্তে নৈরাজ্যবাদীদের দমন করতে ৪ আগস্ট দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪ আগস্ট দুপুর থেকে মোবাইলফোনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটকসহ বেশকিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর সরাসরি গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
দাম্ভিক শেখ হাসিনার পলায়ন
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আশা শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের ক্ষমতার ইতি টানতে হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের দাবির মুখে। ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ এমন দাম্ভিক বক্তব্যের পরেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। সেদিন বেলা ১২টার আগেই শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে যান। সেখান থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দিল্লি পৌঁছান। এরপর থেকে তিনি এখনো ভারতে অবস্থান করছেন।
সকালে দেশ ত্যাগ করলেও ৫ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। যদিও তার আগেই বিষয়টি সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পরে। উল্লাসে রাজপথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা।
এরপর জনগণের উদ্দেশে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভাষণ দেন। ভাষণে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেশ ত্যাগ
শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে দেশজুড়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সুবিধাভোগী আমলা ও ব্যবসায়ীরা যারপরনাই হতাশ ও বিপর্যন্ত হয়ে পরেন। এদের সবারই কথা ছিল, ‘এটা কি হল? আপা আমাদের রেখে পালিয়ে গেলেন কেন?’ এমন হতাশা নিয়ে অনেকে দেশ ছাড়েন। অনেকে দেশ ছাড়তে পরলেও আবার কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহীনির হাতে আটক হন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার
৬ আগস্ট দুপুরের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করা হয় সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে। যদিও ডিএমপি থেকে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ১৪ আগস্ট। এরপর সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন থেকে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়; যা এখনো চলমান।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ করতে দাবি জানানো হয় ছাত্রলীগকে। এরপর তারা আল্টিমেটাম দিলে ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
বাংলার মাটিতে অস্তিত্বহীন শেখ পরিবার
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। গা ঢাকা দেন মাঝারি ও তৃণমূল পর্যায়ের অনেক প্রভাবশালী নেতাও। মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে আসছেন না। এর মধ্যে দলীয় বিভিন্ন পদে থাকা অনেককে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
এত কিছুর মধ্যেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ‘শেখ পরিবারের’ বেশির ভাগ সদস্যদের হদিস মিলছে না। বাংলাদেশে তাদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, তারা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছেন।