কিশোরগঞ্জে ৭৩১ কোটি টাকার বাইপাস প্রকল্প বন্ধ
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের যানজট কমানো এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও হাওরাঞ্চলে যাতায়াতের নির্বিঘ্ন করতে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে প্রায় ৭৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে আট কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণসহ দুই প্রান্তের সড়কের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়। কিন্তু মূল কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পুরো উন্নয়নকাজ।
এতে বিপুল অর্থ গচ্চার আশঙ্কা যেমন রয়েছে তেমনি প্রতিদিনই বেড়ে চলা যানজটে নাকাল হয়ে পড়ছে কিশোরগঞ্জ শহরের মানুষ।
হাওর অঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের জন্য জেলা শহরের মধ্য দিয়ে রাস্তা অতিক্রমের বিকল্প নেই। একইভাবে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত মানুষকেও শহরের ভিতর দিয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাতায়াত করতে হয়। এর ফলে এমনিতেই সরু ও অতিরিক্ত যানবাহনে বিপর্যস্ত জেলা শহরের সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। যা হাওরে পর্যটন মৌসুমে বাড়তি যানবাহনের চাপে আরও নাজুক হয়ে পড়ে।
এ নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ রয়েছে জেলা সদরের মানুষের। বাইপাস না হওয়ায় ক্ষুব্ধ জেলা শহরের বাসিন্দারা।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শহরে যানজটের কারণে নিত্যদিনের চলাফেরাসহ জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো কোনো মতেই সম্ভব হচ্ছে না। যানজটের কারণে ভালো করে হাঁটা পর্যন্ত যায় না দুর্ঘটনার ভয়ে।
সাংস্কৃতিককর্মী আবু জাবিদ ভুঁইয়া সোহেল বলেন, যানজটের কারণে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এতে রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটছে। ব্যবসায়ীদেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে যানজটের কারণে। বাইপাস সড়কটি নির্মিত হলে শহরের যানজট কিছুটা হলেও কমে যেত।
সড়ক ও জনপথ অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, জেলা শহরে যানজট নিরসনে এবং হাওরাঞ্চল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ৭৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের আওতায় শহরের বাইরে সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকা থেকে ছয়না এলাকা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৮ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ এবং হাওরের প্রবেশদ্বার চামড়া বন্দর পর্যন্ত আরও ২০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের কাজ করতেই চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের সময় পার হয়ে গেছে। এ ছাড়া খরচ হয়ে গেছে পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি।
বর্তমানে বাইপাস সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় এখান দিয়ে চলাচলকারীরা ক্ষুব্ধ। সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক বলেন, এই বাইপাস সড়ক নির্মাণে ভরাট করা মাটির সড়কে আমাদের অনেক কষ্ট করে চলাচল করতে হয়। বর্তমানে ধুলাবালি ও খানা-খন্দক এবং বর্ষায় জমে থাকা কাদা-জলের মধ্য দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। সড়কটি চালু হলে জনদুর্ভোগ কমে আসত।
একই রকম ক্ষুব্ধ বাইপাস নির্মাণে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেসব ভূমিমালিকরা। সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের ছয়না গ্রামের বাসিন্দা সুলতান মিয়া বলেন, জমি অধিগ্রহণের কারণে এমনিতেই জমি কমে যাওয়ায় ফসলাদি চাষের সুযোগ সীমিত হয়ে আয় কমে গেছে। তা ছাড়া সড়কের ধূলার কারণে আশপাশে বাদ-বাকি জমির ফসল ও মৎস্য খামারের ক্ষতি হচ্ছে।
বাইপাস প্রকল্পের গুরুত্ব বর্ণনা করে জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, বৌলাই বাইপাসের কাজ শুরু হলেও সেটা বাস্তবে রূপ নেয়নি। যদি এই প্রকল্পকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বাস্তবায়িত না করা হয় তাহলে হাওরাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে না। করিমগঞ্জবাসীও উপকৃত হবে না। সেই সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের যানজটও কমবে না। জন ভোগান্তি আরও বাড়বে।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি ম ম জুয়েল বলেন, আমাদের দেশে প্রকল্প গ্রহণে এবং অর্থব্যায়ে যতটা আগ্রহ দেখা যায়, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ততটাই ধীরগতি দেখা যায়। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও জনগণের সেবা দানে ততটা আগ্রহ দেখা যায় না। এর ফলে রাষ্ট্রের যেমন অপচয় হয়, জনগণও সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধের কথা স্বীকার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। মেয়াদ বর্ধিত হলে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।