আকাশ মণ্ডলের জবানবন্দি মানতে নারাজ নৌযান সংশ্লিষ্টরা
চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে লাইটার জাহাজে সাত হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন আসামি আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান। তাঁকে আদালতে জবানবন্দি শেষে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। যদিও তাঁর দেওয়া বক্তব্যে রহস্য যেন কাটছেই না। এতে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। তাঁর জবানবন্দি মানতে নারাজ নৌযান সংশ্লিষ্টরা।
জাহাজে থাকা সাতজনকে একা কুপিয়ে হত্যার পর এক ঘণ্টা জাহাজ চালিয়েছেন খুনি আকাশ মণ্ডল, এমন বক্তব্য মানতে নারাজ নৌযান শ্রমিক ও মাস্টাররা। তাঁরা বলছেন, একজনের পক্ষে সাতজনকে হত্যা করে একা এত বড় জাহাজ চালানো অনেকটা অবিশ্বাস্য। সঠিক তদন্ত ও নিরাপদ নৌরুটের দাবি তাঁদের।
গত ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে এম ভি আল বাখেরা পণ্যবাহী লাইটার জাহাজে নৌপথে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একে একে হত্যা করা হয় জাহাজে থাকা সাতজনকে। এ ঘটনায় অলৌকিক ভাবে বেঁচে যান জাহাজের স্টাফ জুয়েল। তিনি গলায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মূলত জুয়েলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আকাশ মণ্ডল ওরফে ইফরানকে বাগেরহাট থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১। তিনি এম ভি আল বাখেরা জাহাজে আট মাস ধরে সুকানির দায়িত্বে ছিলেন।
আকাশ মণ্ডলকে আদালতে তুলে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ৩১ ডিসেম্বর আদালতে হাজির করা হলে হত্যাকাণ্ডে নিজে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দেন তিনি। মূলত বেতন-ভাতা না পেয়ে ক্ষোভ থেকেই হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি। ভোর রাতে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে নিজেই জাহাজ চালিয়ে নিয়ে আসেন চাঁদপুরের হাইমচরের মেঘনা নদীর মাঝের চর এলাকায়। তবে তাঁর স্বীকারোক্তির সত্যতা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন রহস্য। কোনোভাবেই একজনের পক্ষে এমন হত্যাকাণ্ড করে জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে দাবি করেন জাহাজ শ্রমিকরা।
ঢাকা-চাঁদপুর নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, ধন্যবাদ জানাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতকে গ্রেপ্তার করার জন্য। তবে তার স্বীকারোক্তি একদমই হাস্যকর। এটা আমাদের কাছে জজ মিয়া নাটকের মতোই মনে হচ্ছে। একজন মানুষ কী করে ইঞ্জিন চালু করেন, তিনিই কী করে অ্যাংকর করেন এবং উত্তোলন করেন। একটি জাহাজ একা কোনো ভাবেই চালানো সম্ভব নয়। তা স্বীকারোক্তি আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হয়। আমাদের দাবি প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা।
ইকবাল হোসেন নামের এক জাহাজের মাস্টার বলেন, আকাশ মণ্ডল স্বীকারোক্তি দিয়ে যে যুক্তি দাঁড় করিয়াছেন, তা আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। কারণ একজন মানুষ একা একসাথে এত কাজ করতে পারেন না। আমরা দীর্ঘদিন যে কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। একটি জাহাজ পরিচালনা করার জন্য ন্যূনতম চার-পাঁচজন প্রয়োজন হয়। আর সেই জায়গায় একজন কীভাবে এতগুলো মানুষকে হত্যা করে জাহাজ চালিয়ে নিয়ে আসবে।
এদিকে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড তদন্ত করছে নৌপুলিশ। আকাশ মণ্ডল রিমান্ডে থাকাকালীন তাঁর সব স্বীকারোক্তির প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে নৌপুলিশ। যদিও এ নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি মামালার তদন্ত কর্মকর্তা কিংবা নৌপুলিশ সুপার।
এ বিষয়ে নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শ আ মাহফুজ উল আলম মোল্লা বলেন, আমরা এম ভি আল বাখেরা জাহাজ পরিদর্শন করেছি। একজনের পক্ষে জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তিনি কীভাবে করেছেন, তা আমাদেন জানা নেই। জাহাজটি দীর্ঘদিন ধরে পাইলট ছাড়াই চলছিল। আমরা জাহাজমালিককে জরিমানার আওতায় নিয়ে এসেছি।