চিকিৎসার জন্য লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকা হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে লন্ডনের হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি প্রধান।
লন্ডনের উদ্দেশে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোডের বাসভবন ফিরোজা থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে তার গাড়িবহর ছাড়লেও ৯টা পযন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড়ে গুলশান ২ নম্বর চত্তর অতিক্রম করতে পারেনি। রাস্তায় দুই ধারে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ দুহাত তুলে তাকে বিদায় জানায়। রাত ১০টা ৫০ মিনিটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
সরেজমিনে দেখা যায়, গুলশান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি চারপাশ ঘিরে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে থাকে। স্লোগান স্লোগানে মুখর করে তুলে। রাস্তার দুপাশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও খালেদা জিয়াকে একনজর দেখার জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন। মানুষের সারি দেখা যায়। সন্তানকে কোলে নিয়ে এক মাকে বলতে শোনা যায়, ‘দেখ দেখ ওই যে খালেদা জিয়া।’ নেতাকর্মীদের মুখেও আবেগপ্রবণ কথা শোনা যায়।
বিকেল থেকেই ফিরোজার সামনে বিএনপির নেতাকমীরা ভিড় করতে থাকে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম উচ্চারণ করে স্লোগান দিতে থাকেন। সন্ধ্যা সোয়া ৬ টায় খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় প্রবেশ করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি গেটের সামনে থাকা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সুশৃঙ্খল অবস্থায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকুন। রাস্তা ফাঁকা রেখে দাঁড়ান।’ সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় দিকে তিনি ফিরোজা থেকে বের হন।
খালেদা জিয়ার এই বিদেশযাত্রার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত বছর পর লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হবে তার। হিথ্রো বিমানবন্দরে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান।
বিএনপির চেয়ারপারসনের লন্ডন যাত্রাপাথে কাতারে এক ঘণ্টার বিরতি থাকবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী। খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন মোট ১৬ জন।
ঢাকা থেকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মেডিকেল বোর্ডের ছয়জন সদস্য খালেদা জিয়ার সঙ্গে রওনা হয়েছেন। এরমধ্যে চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিকসরা রয়েছেন। এরা হলেন—অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।
এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শার্মিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
গত সোমবার বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘বুধবার লন্ডনে পৌঁছেই উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হবেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, লন্ডনের হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে থেকে তাকে (খালেদা জিয়া) সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এই হসপিটালে উনি চিকিৎসাধীন থাকবেন।’ ইতোমধ্যে তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় কাগজপত্র ও বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্টসমূহ সেখানে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান জাহিদ হোসেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে রাজনীতিতে চলার পথের দীর্ঘদিনের সারথি- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সব সদস্যদের তার বাসায় ডেকে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘গণতন্ত্রই শেষ কথা।’
এ সময় দলের নীতিনির্ধারকদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঐক্যবদ্ধ থেকে জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেন। দেন ঐক্যের বার্তা। বর্তমানে গণতন্ত্রের পূণরুদ্ধারের স্বার্থে বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচনের যে দাবি করা হচ্ছে–তার সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তিনি।