মোজাম্বিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় সংকটে ৫ হাজার বাংলাদেশি
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, মোজাম্বিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় দেশটিতে বসবাসরত পাঁচ হাজার বাংলাদেশি আর্থিক ও মানসিক সংকটে ভুগছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ের নতুন ভবনে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পররারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের এই মহাপরিচালক।
রফিকুল আলম বলেন, গেল বছরের ৯ অক্টোবর মোজাম্বিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল মোজাম্বিক লিবারেশন ফ্রন্ট (ফ্রেলিমো) সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। এরপর মোজাম্বিকে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয় ২৪ অক্টোবর থেকে।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার পর বেশ কয়েকটি শহরে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে মোজাম্বিকে বসবাসরত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি আর্থিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি মালিকানাধীন দোকান লুটপাট ও সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হওয়ায় অনেক বাংলাদেশি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। মাপুটো, নাম্পুলা ও জাম্বেজিয়া প্রদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
মোজাম্বিকে বসবাসরত বাংলাদেশিরা মূলত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের বেশিরভাগই মুদি দোকান পরিচালনা করেন। এ ছাড়া বেশকিছু সংখ্যক বাংলাদেশি কৃষিখাতে নিয়োজিত।
রফিকুল আলম আরও বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস, লিসবন, মোজাম্বিকের সমবর্তী দায়িত্বে রয়েছে এবং মোজাম্বিকে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমিউনিটির নেতাদের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
লিবিয়া ও তিউনিসিয়াতে নৌ দুর্ঘটনা
তিউনিস থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরের সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর মাহদিয়া নামক অঞ্চলে গত ১ জানুয়ারির নৌ দুর্ঘটনায় ১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি এবং দুজন সুদানের। শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে তিউনিশিয়া সফর করেছে।
এ ছাড়া গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর আরেকটি নৌ দুর্ঘটনায় ৩৬ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এতে একজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশি বলে দূতাবাস। বাংলাদেশ হতে মৃতের নিকটাত্মীয়ের ডিএনএর নমুনার সঙ্গে মিলসাপেক্ষে লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার জন্য ভিসাপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ উদ্যোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন এবং বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশি মিশনগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন কর করা হচ্ছে।
এ প্রক্রিয়ায় চলতি বছরের ১ থেকে ৮ জানুয়ারি অব্দি গুরুতর আহত আটজন ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের চার সদস্যদের জন্য দ্রুততম সময়ে ভিসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ১১ জন আহতকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে এবং তাদের মধ্যে দুজন ইতোমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। ২৮ জনের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয় প্রক্রিয়াধীন।
রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার ইস্যু
ব্রিফিংয়ে রফিকুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ৩৬ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষের ফলে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, সীমান্তে আমাদের সব সীমান্তরক্ষী বাহিনী সর্বাত্মক সতর্কতায় আছে। সব কিছুর পাশাপাশি আমাদের মানবিক দিকটাও বিবেচনায় রাখতে হয়েছে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে রফিকুল বলেন, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী সম্পূর্ণ এলাকা আরাকান আর্মি দখল করায় সীমান্ত পারাপার বেড়ে যেতে পারে। মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডসহ আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতির পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।