কোন খাত কত বরাদ্দ পাচ্ছে
জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী এক বছরের রাষ্ট্র পরিচালনার আয়-ব্যয়ের মোট হিসাবসহ কোন মন্ত্রণালয় কত টাকা করে বরাদ্দ পাচ্ছে তার চিত্রও থাকছে বাজেটে।
জাতীয় সংসদে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় প্রস্তাবিত বাজেট পেশ শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি চতুর্থ বাজেট। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে জানা গেছে—মোট ৬২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের আওতায় এ ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয় এক লাখ ৯০ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৪১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৪০ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয় পাচ্ছে ৩১ কোটি টাকা, জাতীয় সংসদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৩৪১ কোটি টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পাচ্ছে পাঁচ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ১৩৭ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট পাচ্ছে ২৩০ কোটি টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বরাদ্দ এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চার হাজার ৭৪ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন পাচ্ছে ১২৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২৯১ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের বরাদ্দ তিন হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জন্য দুই হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের আট হাজার ৯৩ কোটি টাকা, পরিকল্পনা বিভাগের জন্য এক হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ পাচ্ছে ২৭৪ কোটি টাকা ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের জন্য বরাদ্দ ৪১০ কোটি টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ৫৪৫ কোটি টাকা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ এক হাজার ৬৫১ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৪০ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ পাচ্ছে ৪৫ কোটি টাকা, আইন ও বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।
জননিরাপত্তা বিভাগের বরাদ্দ ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ পাচ্ছে ৪০ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৩১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বরাদ্দ ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ ২৯ হাজার ২৮২ কোটি টাকা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জন্য এক হাজার ৯১৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ১০ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পাচ্ছে চার হাজার ২৯০ কোটি টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫৭ কোটি টাকা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ছয় হাজার ৮২১ কোটি টাকা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় পাচ্ছে এক হাজার ৯৯ কোটি টাকা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬৩৭ কোটি টাকা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দুই হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পাচ্ছে এক হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগের বাজেট ৪১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের বরাদ্দ এক হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা।
এ ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এক হাজার ৫২১ কোটি টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৯৯০ কোটি টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬২৮ কোটি টাকা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য এক হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ২৪ হাজার ২২৪ কোটি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পাচ্ছে তিন হাজার ৮০৮ কোটি টাকা এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ এক হাজার ৫০১ কোটি টাকা।
এর বাইরেও ভূমি মন্ত্রণালয় পাচ্ছে দুই হাজার ৩৮১ কোটি টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১০ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ছয় হাজার ২১৩ কোটি টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ১০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৩৬ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ১৮ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সাত হাজার ২২৪ কোটি টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ সাত হাজার চার কোটি টাকা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় পাচ্ছে দুই হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পাচ্ছে এক হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগ পাচ্ছে ২৪ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছয় হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য ১৭৮ কোটি টাকা, সেতু বিভাগের ৯ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের বরাদ্দ ৯ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা, সুরক্ষা সেবা বিভাগের চার হাজার ১৮৭ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ সাত হাজার ৫৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে।
‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বড় ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যেখানে বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অনুদানসহ ঘাটতি থাকবে দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আয়ের খাতগুলো থেকে কর বাবদ তিন লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ২৭১ কোটি টাকা।