দুর্যোগ মোকাবিলায় ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল
‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’—এ শিরোনামকে সামনে রেখে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাত মোকাবিলা তহবিলের ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরেও পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর ফলে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব মোকাবিলা করে অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় ফিরছে। এ প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে অর্থনীতিকে অতিমারি-পূর্ব সুদৃঢ় অবস্থানে পুরোপুরি ফিরিয়ে নিয়ে উন্নয়নের গতিকে আরও বেগবান করতে চলতি অর্থবছরের ন্যায় আগামী অর্থবছরেও প্রণোদনা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। এ ছাড়া এ অতিমারির প্রলম্বিত প্রাদুর্ভাব কিছুটা কাটিয়ে ওঠার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আগামী বাজেটে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র নির্ধারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির চলমান এ অস্থিরতার প্রভাব কাটিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে আরও এগিয়ে যেতে পারে সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, শিল্প উৎপাদন, সিএমএসএমই, সেবা খাত ও গ্রামীণ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসৃজন এবং প্রবাস-ফেরতদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিতকল্পে নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর আগামী বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে এ সমস্ত খাতের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষতি কাটিয়ে উঠে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে ও সাময়িকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধি, গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ ও নিম্ন-আয়ের মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে/স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের গ্রহণ করা কর্মসূচি চলমান থাকবে। অকাল বন্যা, ঝড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিক অথবা অর্থনৈতিক কোনো সংকটে কর্মহীন বা আয় হ্রাস পাওয়া নিম্ন-আয়ের ব্যক্তিদের জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তার দেওয়া সরকারের একটি অগ্রাধিকার।
আজ বাজেট উপস্থাপনের পর নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংসদ সদস্যেরা আলোচনা করবেন। এরপর আগামী ৩০ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট এটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট এটি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি চতুর্থ বাজেট।
স্বাধীনতা-পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন ওই বাজেট পেশ হয়। তাজউদ্দীন আহমদ ওই দিন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর, অর্থাৎ দুই অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এরপর আরও দুবার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ, সেটি সবশেষ দাঁড়ায় এক হাজার ৮৪ কোটি টাকার।
১৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দিয়েছেন সদস্য প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইফুর রহমান। দুজনেই ১২টি বাজেট উত্থাপন করেছেন। তবে, আবুল মাল আবদুল মুহিতই আওয়ামী লীগের হয়ে টানা ১০ বার বাজেট পেশ করেছেন। তিনি প্রথম বাজেট দেন ১৯৮২-৮৩ সালে, এরশাদের শাসনামলে। সেটার আকার ছিল চার হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। আর সবশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তাঁর বাজেটের আকার ছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার।