বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমেছে
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমেছে এক হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।
‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’—শিরোনামকে সামনে রেখে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরদ্দের কথা তুলে ধরেন।
এর মধ্যে বিদ্যুতে ২৪ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা এবং জ্বালানিতে এক হাজার ৮৭০ কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বছর বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে উন্নয়ন বরাদ্দ মোট বাজেটের তিন দশমিক ৯ শতাংশ।
বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছিল ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা।’
বাজেট প্রস্তাবে জানানো হয়—বর্তমান বিশ্বে জ্বালানি তেল ও এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) মূল্য বাড়ছে। এ কারণে দেশেও জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করা হবে। কিন্তু, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে যতটা জ্বালানির দাম বাড়বে, তার পুরোটা দেশে বাড়ানো হবে না।
বাজেট অধিবেশনে বলা হয়, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে বিপুল আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও আরও গ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসকল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়বে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত ১৩ বছর ধরে বিদুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে দেশে সম্প্রতি মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ) ২৫, হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ১৩ বছরে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট-আওয়ার হতে ৫৬০ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত করতে পেরেছি। এ সময়কালে পাঁচ হাজার ২১৩ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন এবং তিন লাখ ৩৬ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস ১৪ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবে আরও জানানো হয়, বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। জমির প্রাপ্যতা, জ্বালানি পরিবহণ সুবিধা ও লোড সেন্টার বিবেচনায় পায়রা, মহেশখালী ও মাতারবাড়ী এলাকাকে পাওয়ার হাব চিহ্নিত করে বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ শেষে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্যিক উৎপাদন উদ্বোধন করেছেন।
এ ছাড়া কয়লাভিত্তিক রামপাল এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিকাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ পুরোদমে চলছে। রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নাধীন।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে প্রায় ৭৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। মোট চাহিদার শতকরা ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উৎপাদনের লক্ষ্যে সৌরশক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও জানান, পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং গোপালগঞ্জ-রামপাল ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন দুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে এরই মধ্যে কমিশনিং করা হয়েছে।
এ ছাড়া মোংলা-খুলনা (দক্ষিণ) ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মিত হয়েছে। গোপালগঞ্জ-আমিনবাজার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের ৭.৫ কিলোমিটার পদ্মা রিভার ক্রসিং অংশের পদ্মা রিভার বেডের ৭টি টাওয়ারের ফাউন্ডেশনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ৪০০ কেভি ও ২৩০ কেভি ভোল্টেজের ছয়টি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
বাজেটে জানানো হয়—দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি জ্বালানির চাহিদাও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। যার একটি বড় অংশ মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। দেশে আবিষ্কৃত ২৮টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে ২০টিতে উৎপাদন চলছে। ২০০৯ সালে দেশে দৈনিক এক হাজার ৭৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হতো, যা বেড়ে বর্তমানে দুই হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে। পাশাপাশি গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণে দৈনিক প্রায় ৬০০ থেকে ৭৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) হিসেবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হচ্ছে।