নিয়োগপরীক্ষায় পে-অর্ডার চাইতে পারবে না ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, নিয়োগপরীক্ষার জন্য আবেদনকারীদের কাছে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার চাইতে পারবে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কোনো প্রতিষ্ঠান এমনটি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ব্যাংক ও আর্থিক খাতের গ্রাহক অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন গভর্নর।
গ্রাহকদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে নানামুখী সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানান আতিউর রহমান। তিনি বলেন, গ্রাহকদের দুর্ভোগ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ‘এফআইসিএসডি’ নামের আলাদা একটি বিভাগ খোলা হয়েছে। যেখানে ‘১৬২৩৬’ নম্বরে কল দিয়ে তার সমস্যার কথা জানাতে পারে। কোনো ব্যাংক জালিয়াতি, অনিয়ম, আত্মসাত বা নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ কোটি টাকা আদায় করে তা গ্রাহককে ফেরত দিয়েছে।
গভর্নর বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জমাপড়া মোট অভিযোগের ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ নিষ্পন্ন হয়েছে। ২০১৪ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ দশমিক ৯ শতাংশ। আর ২০১৫ সালে নিষ্পন্ন হয়েছে শতভাগ। এখন ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। এর প্রভাবে দেশের রেমিটেন্স ও রিজার্ভ বাড়ছে। ব্যবসাসংক্রান্ত সমস্যা বা অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আলাদা একটি ডেস বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যেখানে ব্যাংক লোন, এলসি খোলাসহ অন্যান্য সমস্যার দ্রুত সমাধান হচ্ছে।
গ্রাহককে তাঁর প্রাপ্য সেবা সম্পর্কে সচেতন করতে ফেসবুক, ওয়েবসাইটসহ নানা মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর সার্ভিস চার্জ যাতে গোপন না থাকে তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যাংক যাতে এমনটি না করতে পারে সেদিকে মনিটরিং করছে। বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা সহজ করতে ব্যাংকগুলো ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। কর্মীদের প্রশিক্ষিত করার ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের তিন কোটি মোবাইল গ্রাহক যাতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পায় সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চাকরি প্রত্যাশীদের উদ্দেশে ড. আতিউর বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রত্যাশীদের বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। সদ্য পড়া-লেখা শেষ করে অনেকেই বেকার থাকে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপরীক্ষায় আবেদনকারীর কাছে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার না চাইতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। প্রবেন্ধ তিনি বলেন, ‘ব্যাংক গ্রাহকভিত্তিক ভোক্তা সংগঠন এখন সময়ের দাবি। এটি ব্যাংকের দুর্নীতি ও আর্থিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করবে। এ ধরনের খাতভিত্তিক ভোক্তা সংগঠন সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতার মধ্যে সমন্বয় করবে।
ব্যাংক সুদ প্রসঙ্গে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংক মালিকরা দ্বৈত ভূমিকা রাখছেন। ব্যবসায়ীদের চেম্বার থেকে সুদের হার কমানোর দাবি করছেন। আবার তারাই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বসে উচ্চ সুদের হার ধার্য করেছেন।
আলোচনাসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হোসেন প্রমুখ।