ঢাবিতে ‘গেস্টরুমে’ নির্যাতনের অভিযোগ, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হলে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে কথিত গেস্টরুমে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বরাবর গতকাল বৃহস্পতিবার এমন অভিযোগ দেন ওই শিক্ষার্থী। তিনি হলে ফিরতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান।
অভিযোগ দেওয়া ওই শিক্ষার্থীর নাম মোল্লা তৈমুর রহমান। তিনি ঢাবির শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়েন।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম রোকনুজ্জামান রোকন। তিনি ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী বলে জানা গেছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে হলের ১০৮ নম্বর কক্ষে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোল্লা তৈমুর রহমানকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান রোকন। নির্যাতনের ফলে কয়েক ঘণ্টা কানে শুনতে পাননি তিনি এবং বিষয়টি হল প্রশাসনকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা উল্লেখ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ওই শিক্ষার্থী।
তৈমুর বলেন, ‘আমি বাঁধনে কাজ করায় বাঁধনের এক বড় ভাই আমাকে রক্তের গ্রুপ জানতে হলের মাঠে ডাকেন। পরে রোকন ভাই রাতে গেস্টরুমে এসে আমি হলের মাঠে কেন গিয়েছি এবং বাঁধনের সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে কেন কথা বলেছি, তা জানতে চান। আমি কারণ বললে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং একপর্যায়ে কলার ধরে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে আমাকে থাপ্পড় মারে। এর ফলে আমি অচেতন হয়ে পড়ি এবং কয়েক ঘণ্টা কানে শুনতে পাইনি। পরে সিনিয়র ভাইয়েরা এসে আমাকে এসবের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যেতে বলেন। এমনকি আমি হল প্রশাসনকে জানালে তিনি আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং হল থেকে বের করে দেবেন বলে জানান।
তৈমুর আরও বলেন, ‘আমি একপর্যায়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে হল ছেড়ে ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নিই। আমি ভীষণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, প্রভোস্ট স্যারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ এফ রহমান হলের প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রোকন ভাই খুবই অ্যাগ্রেসিভ। এর আগেও তিনি অনেক ছাত্রকে গেস্টরুমে প্রচুর মেরেছেন। নিজেকে মোস্ট পলিটিক্যাল প্রমাণের জন্য তিনি জুনিয়রদের প্রচুর গালিগালাজ ও মারধর করেন। এমনকি কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুকে মেরে কান ফাটিয়ে রক্তাক্ত করেছিলেন তিনি।’
অভিযুক্ত রোকন নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে দাবি করেন, ‘নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। গেস্টরুমে আসার পর তাঁকে (তৈমুর) জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি কী কোনো ভাইকে চেন? অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরও সে উত্তর না দেওয়ায় তাকে বলেছিলাম, তুমি কি বেয়াদব? এতটুকুই, এর বাইরে কোনো কিছু হয়নি।’
অভিযুক্ত রোকন হল ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম শাহরিয়ার মুনের অনুসারী বলে জানা গেছে। মুন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী বলেও জানা যায়। এ বিষয়ে মোনায়েম শাহরিয়ার মুন বলেন, ‘এ অভিযোগটি সত্য হলে হল প্রশাসন তাঁর (রোকন) যাতে শাস্তি নিশ্চিত করে, সেটি আমিও নিশ্চিত করব। তৈমুরের ওপর দ্বিতীয় কোনো আঘাত না আসার দায়িত্ব আমি নিলাম। আমার কোনো কর্মী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাঁর শাস্তি নিশ্চিত করাটা আমার নৈতিক দায়িত্ব।’
বিষয়টি জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও না ধরায় হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।