ঢাবিতে হলের কক্ষ দখলে ছাত্রলীগের দুপক্ষের ‘হাতাহাতি-ভাঙচুর’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একটি আবাসিক হলে কক্ষ দখল করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের নেতাদের বিরুদ্ধে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দিন হলে গতকাল রোববার রাত ১১টার দিকে শুরু হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। ভাঙচুর এবং দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতার অভিযোগ, ওই হলের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ওয়ালিউল সুমন ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানের গ্রুপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। ওয়ালিউল সুমন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং লুৎফর রহমান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী।
অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আশিকুর রহমান আশিক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইসমাইল, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সংস্কৃত বিভাগের মহিত ও উর্দু বিভাগের রাসেলের নেতৃত্বে প্রথমে হলের ২১৪ নম্বর কক্ষে আক্রমণ চালানো হয়। ওই কক্ষে সভাপতি ওয়ালিউল সুমনের গ্রুপের কর্মীরা থাকতেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের জুনিয়ররা হামলায় অংশ নিতে না চাইলে আশিকুর রহমান আশিক (লুৎফরের অনুসারী) জোর করে হামলায় অংশ নিতে তাঁদের বাধ্য করেন। এ হামলায় দুটি ল্যাপটপ, ২৫ হাজার টাকা, জামা-কাপড়, মুঠোফোন ও হলের আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এ ঘটনার পাল্টা জবাবে সভাপতি ওয়ালিউলের অনুসারীদের মধ্যে ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সোহান, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শাহারিয়ার সাগর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের হেদায়েতুল ইসলাম, আরবি বিভাগের নাঈমের নেতৃত্বে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় উভয়পক্ষকে হাতে স্ট্যাম্প, রডসহ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা যায়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগ সভাপতি ওয়ালিউল সুমন বলেন, সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমানের অনুসারীরা যখন কক্ষ দখল করতে যান, তখনই এ ঘটনা ঘটে। এটা আসলে ঠিক না। আমি অনেক চেষ্টা করেছি এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য। আশা করি, সামনে আর এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না।’
কক্ষ দখলের বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, ‘কক্ষ দখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঝামেলা হয়েছিল। আমি ও সভাপতি অনেক চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে আমি জানি না। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তবে সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত।’
এদিকে, এ ঘটনায় হল প্রশাসন থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘গতকাল রাতে হলে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’