ঢাবির বঙ্গমাতা হলে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে হাতাহাতি এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যকার একজন রাজধানীর এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গতকাল শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কোহিনূর আক্তার রাখী ও সাধারণ সম্পাদক সানজিনা ইয়াসমিনের অনুসারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রনক জাহান রাইন ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় উপপ্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক তানিয়া আখতার তাপসী গ্রুপের এ সংঘর্ষ হয়।
হল সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা ছিল গতকাল। এ উপলক্ষে ছাত্রলীগ থেকে প্রতি নারী হল শাখাতেই শাড়ি প্রদান করা হয়েছিল। এজন্য তানিয়া আখতার তাপসী ও রনক জাহান রাইন তাঁদের অনুসারীদের জন্য ছাত্রলীগ কর্তৃক প্রদানকৃত শাড়ি নিতে চাইলে বঙ্গমাতা হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কোহিনূর আক্তার রাখী ও সাধারণ সম্পাদক সানজিনা ইয়াসমিন তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের নির্দেশে তাঁরা গ্রুপ নিয়ে শাড়ি ছাড়াই শোভাযাত্রায় যোগ দেন। শোভাযাত্রা শেষে হলে ফেরার পর শাড়ির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের ওই দুই পক্ষ।
হলের আরেকটি সূত্র জানায়, রনক জাহান রাইন ও তানিয়া আখতার তাপসী হল সভাপতি কোহিনূর ও সাধারণ সম্পাদক সানজিনার নেতৃত্বে না গিয়ে আলাদা গ্রুপ নিয়ে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানে গেলে হল ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নাখোশ হন এবং এক পর্যায়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এরপরই দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়।
খবর পেয়ে ঢাবির প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী সেখানে গিয়ে বঙ্গমাতা হলের প্রাধ্যক্ষ ড. নিলুফার পারভীন এবং ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করেন।
তানিয়া আখতার তাপসী বলেন, ‘এটা আসলে আমাদের বঙ্গমাতা হল ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিষয়। একটু ঝামেলা হয়েছিল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার, হল প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে মীমাংসা হয়ে গেছে। আমরা একে অপরের সঙ্গে মিউচুয়াল হয়ে গেছে। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।’
কোহিনূর আখতার রাখী বলেন, ‘তাপসীই এ ঘটনার জন্য দায়ী। হলের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি কারও কথা শোনেন না তাপসী। ওরা আমাদের মেয়েদের ওপর আক্রমণ করেছে। ওরা আমাদের মেয়েদের ওপর ফুলের টব ছুড়ে মেরেছে। ভাগ্যিস কোনো মেয়ের গায়ে লাগেনি। ওদের আক্রমণে একজনের পা কেটে গেছে। আরেকজনের পেটে লাথি দিয়েছে, সে এখন পপুলার হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার অবস্থা ভালো না। আর আমাদের ছয় থেকে সাতজনের মত আহত হয়েছে।’
কোহিনূর আরও বলেন, ‘তাপসী আমাদের সঙ্গে হল ক্যান্ডিডেট ছিলেন। কিন্তু হতে পারেনি। এজন্য আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের কথা এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত। কিন্তু আমরা কখনোই তার এসব কথার প্রতিক্রিয়া দেখাইনি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো ক্ষেত্রেই এই ধরনের ঘটনা আমরা কামনা করি না। এটা আসলে খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে আমরা ব্যবস্থা নেব। ঘটনায় যারা দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
শাড়ি নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘আসলে শাড়ি নিয়ে এরকম ঘটনা ঘটেনি। তবে, প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির বাইরে একটি গ্রুপ আলাদা মুভ করছে। তাদের মুভ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এরকম একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।’
বঙ্গমাতা হল প্রাধ্যক্ষ ড. নিলুফার পারভীন বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের নিজেদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল। সবাই মিলে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করেছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ঘটনার পর হল প্রশাসনকে নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করেছি। শিক্ষার্থীদের একান্তই ব্যক্তিগত আবেগ থেকে বিষয়টা ঘটেছে। দুই পক্ষের একটু উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল এবং তারা মুখোমুখি হয়েছিল। তারপর হল প্রশাসনের সহযোগিতায় তা সলভ করা হয়।’